Saturday, July 9, 2016

Vidyalay - Prothom parba


                                    বিদ্যালয় -প্রথম পর্ব


Prayer শেষ  হওয়া মাত্রই ক্লাস সিক্স এর ছাত্ররা attention পোসে ready  হয়ে দাঁড়ালো।  ক্লাস মনিটর এর নির্দেশে সবাই গুটি গুটি পা ফেলে তিন তোলার দিকে হাঁটা দিল। এদের কারোর মনে এখন ভয়, কারোর ঔৎসুক্য , কারোর হয়তো আবার বিরক্তি। প্রথম পিরিয়ড এই অঙ্ক ক্লাস। আজ উনিট টেস্ট এর খাতা দেবেন স্যার। দু মাস হয়েছে এরা সবাই সেকেন্ডারি সেক্শন এ উঠেছে। এই কয়েকদিন আগেও যারা নিজেদের সব থেকে বড় মনে করতে, হঠ্যাৎ -ই গত দু মাসে সব উল্টে যাওয়ার সাথে মানিয়ে নিয়ে পারছে না। ললিত মোহন আদর্শ বিদ্যালয় এর ছাত্ররা আমাদের এই গল্পের বর্তমান নায়কবৃন্দ। এই বিদ্যালয়টি স্হাপিত হয় ঊনিশশো ছিয়াত্তর সালের ষোলোই ফেব্রুয়ারি। পশ্চিম বাংলার পূর্ব কোনে সময় এর সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে ওঠা শান্ত শহর বালুরঘাট।  বড় অদ্ভুত লোকেশন এই ছোট্ট শহর এর। তিন দিক দিয়ে বাংলদেশ এর বর্ডার  ঘিরে রেখেছে এই শহরকে। উত্তর-পশ্চিম দিকের দরজা খোলা ভারতের দিকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই খুব কাছে BSF ক্যাম্প স্থাপন করে ভারতীয় army পতিরাম নামক এক ছোট্ট গ্রামে (এই ছোট্ট গ্রামের-ই  ছেলে ভারত বিখ্যাত, মাথামোটা কিন্তু সুমধুর গায়ক অভিজিৎ ) ।  নিকটে BSF থাকার সুবাদে বালুরঘাট এর বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ দিলীপ ধর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট  কে আর্জি জানান এই শহরে CBSE স্কুল চালু করতে। বেশ কিছু জল ঘোলার পর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট পার্মিশন দেয় স্কুল চালু করার। প্রথমে প্রাইমারি , তারপর প্রগ্রেস বিচার করে ক্লাস এইট অবধি পোড়ানোর পার্মিশন আসে। ধীরে ধীরে ক্লাস টেন  ও টুয়েলভ খোলার অনুমতিও চলে আসে। দু বীঘা চাষের জমি কিনে স্কুল এর প্রথম বিল্ডিং শুরু।  সময় এর সাথে ক্লাস এবং ছাত্র দুটোই বাড়ে। তাই নতুন বিল্ডিংও গড়ে ওঠে পুরোনো বিল্ডিং এর পাশে। পুরোনো বিল্ডিং এ ক্লাস হয় নার্সারি থেকে ফাইভ।  সিক্স থেকে টুয়েলভ নতুন বিল্ডিং।
অগত্যা বোঝাই যাচ্ছে যারা ক্লাস ফাইভে এ ছিল দাদা, তারাই এখন  সব চেয়ে ছোট হওয়ার  আখ্যা পাচ্ছে। Teacher রা তো বটেই, দাদা দিদিরাও এদের শুধু তাচ্ছিল্যই  করে। এই দু মাসে এগারো বছরের বাচ্চা রা নিজেদের আবার ছোট ভাবতেই শুরু  করেছে। হয়তো কেউ কেউ করেনি। ইতিহাস হয়তো এদের মধ্যেই অনেক leader খুঁজে পাবে। হয়তো অনেকে হারিয়ে যাবে বাস্তবের যাঁতাকলে। কিন্তু আপাততঃ আমরা বর্তমানে। আর বর্তমান-ই সব চেয়ে মধুর।
এক এক করে ছাত্ররা ক্লাসে ঢুকলো। ক্লাস মনিটর মৌদুদ হোসেন লম্বা চেহারার।  হোস্টেলে  থাকে। এর বাড়ি ফারাক্কায়। হয়তো ক্লাসের  বাকিদের থেকে এক দু বছর বড় বলেই চিরকাল মনিটর হয়ে এসেছে। মৌদুদের সাথে কেউ তর্কে যায় না। মৌদুদ-ও কারোর ওপর দাপট দেখায় না। কিন্ত ক্লাসে অনিয় হলে  মৌদুদ স্যারদের নালিশ করতে একটুও সময় নষ্ট করে না। তাও সবাই চেঁচায় , মার খায়, কাঁদে , আবার একই জিনিস করে। নিজের  ক্লাসে র কে বোরো, কে ছোট, কে দাদা, কে ভাই ! সবাই সবার ঘারে হাত  দিতে পারে। অন্য কোনো সম্পর্কেই যা  পারা যায় না।
মৌদুদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে teacher  আশা অবধি।   ওকে  ঢুকতে দেখেই সবাই চুপ করে বেঞ্চে পড়ে।  প্রথম ক্লাস ম্যাথেমেটিক্স।  অঙ্ক স্যার ঢুকলেন : চোখে চশমা, এক হাতে ডাস্টার আর অন্য হাতে diary. ইনি রোগা, লম্বা , মাথার চুল পাতলা কিন্তু ঘার অবধি পেঁচিয়ে পড়েছে। হাতের জিনিসগুলো teacher এর টেবিলে রেখে বললেন , "মৌদুদ , যা তো আমার ডেস্ক থেকে ইউনিট টেস্ট এর খাতা গুলো নিয়ে আয়। "
এই নিয়েই prayer লাইনে ভয় ছিল কয়েকজনের। কি যে হবে? অঙ্ক পরীক্ষার খাতা দিয়েই শুরু হতে হলো? বাড়ি গিয়ে যে ক ঘা অপেক্ষা করছে কে জানে?
লাস্ট বেঞ্চে বসা তিন বালক তখন চারিদিকে বন্ধুদের দেখছে আর নিজেদের মধ্যে হাসছে।  এরা তিন জন হলো ক্লাস topper . আর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে এদের বন্ধুত্ব শুরু। বেঞ্চের বাঁ সাইডে বসেছে ঋত্বিক , মাঝে বিজয় ও ডান পাশে সৌর্য।  ঋত্বিক ফর্সা,  চোখ সর্বদা চাঞ্চল্যে ভরা , মাথা ভরা কুচকুচে কালো চুল।  চেহারায় একটু মোটা কিন্তু হাত রোগা। বিজয় শান্ত প্রকৃতির , দেখেই মায়া আসে। ওকে দেখে মনে হয় লম্বা হবে বড়  হয়ে। স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে , নিজের মনে কি ভাবে ওই জানে।  ওর দুই বন্ধু ওর মতো গভীর এই বয়েসে হয়ে ওঠেনি। গায়ের রং সাদা, ছোট করে কাটা ঘন চুল মাথা ভোরে আছে। এখন অপেক্ষা করছে খাতা পাওয়ার।  ওর খালি মনে হচ্ছে দ্বিতীয় অঙ্কটা ভুল করেছে। যদিও ঋত্বিক ওর কথায় পাত্তা দেয়নি একটু আগেও । পাশে বসে দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সৌর্য।  ও জানে  দশে দশ পাবে পরীক্ষায়। ওর গায়ের রং তামাটে , চোখে হালে চশমা জুড়েছে।  মাথার চুল একটু বড় বাকিদের তুলনায়। সুন্দর কায়দায় আঁছড়ানো। দাদাকে দেখে গত বছর থেকেই পুশ-আপ আর রিং করতে শুরু করেছে সৌর্য। তাই ওর চেহারায় খাঁজ আর ভাজ উভয়-ই প্রকাশ পাচ্ছে।
মৌদুদ খাতা আনার সময়ে ক্লাসে attendance নিয়ে নেন স্যার। এর পর এক এক করে নাম ধরে ডাকতে থাকেন আর খাতা দিতে থাকেন। প্রথমেই লাস্ট বেঞ্চ থেকে তিন জন গিয়ে খাতা নিয়ে ফেরে। সবাই তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। এরা তো দশ পাবেই। কিন্তু একি! ঋত্বিক-কে যে দেখা যাচ্ছে ছলছল চোখে ফিরছে ! বাকি দুজনের হাসি দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে তারা দশ পেয়েছে।
সৌর্য আর বিজয় দেখলো ঋত্বিক-এর  খাতায়  বড়  করে আট দেখা যাচ্ছে। শেষ অঙ্কের লাস্ট স্টেপে  ভুল করেছে। ওরা জানে এই সময় ঋত্বিক কোনো কথা বলবে না।  বাড়িতে বকা খাওয়ার ভয়ে এখনই চোখে জল চলে এসেছে ওর। নিজের ভুলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বন্ধুদের দিকে তাকাচ্ছে না। চোখ তুলে বাকিদের মুখ দেখলো। মোটামুটি অনেকেই খুব খুশি।  তাহলে সবাই ওর থেকে ভালো করেছে প্রথম অঙ্ক পরীক্ষায়। নিজেকে অঙ্কে খুব খারাপ মনে হলো ওর।  অঙ্ক  বাজে। ইংরেজি খাতা দিক।  ও-ই  highest পাবে। ম্যাডাম তো বলেই দিয়েছেন যে কাউকে সহজে দশ দেবেন না।  ওর থেকে ভালো কেউ করবে না ঐ পরীক্ষায়, ও জানে। এসব ভাবতে ভাবতেই স্যারের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
"জিরো পেয়েছিস? আমি কি এতো বাজে পড়ালাম রে তোদের?"
ঋত্বিক চোখ তুলে দেখলো সঞ্জীব খাতা নিতে গেছে।  ফিক করে হেসে ফেললো ঋত্বিক।  তাকালো বন্ধুদের দিকে। সৌর্য -ও হাসলো ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু বিজয় হাসছে না।  কেমন করুন ভাবে তাকিয়ে আছে সঞ্জীবের দিকে। ওকে দেখে দুই বন্ধু একটু লজ্জা পেলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো  স্যারের বকা চুপচাপ শুনছে সঞ্জীব।
"নে  যা।  যা ইচ্ছে কর। পড়াশুনা করবি কেন ?" বলে খাতাটা সঞ্জীবের হাতে ঠেলে দিলেন স্যার।  সঞ্জীব মাথা নিচু করে গটগট করে ফিরে এলো নিজের জায়গায়। বাকি ছেলে মেয়েরা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে তখন। কিছুক্ষন হেড -ডাউন করে থাকলো সঞ্জীব।  নিষ্ঠুর বন্ধুদের ওপর রাগ হচ্ছিলো খুব। কিন্তু উত্তর কিভাবে দেবে? নিজের দোষেই তো আজ সবাই ধিক্কার দিচ্ছে ওকে।  সঞ্জীবের বাড়ি গঙ্গারামপুর-এ। হোস্টেলে থাকে। ক্লাস-এর ভালো ছাত্রদের পড়াতে বাড়িতে মাস্টার আসে, ও জানে।  ওকে পড়াতে কেউ আসেনা। স্কুল-এই তো পড়ানো হচ্ছে , আবার কে পড়াবে?
ক্লাসওয়ার্ক -এর খাতা বের করে টেবিলে রেখে আবার হেড-ডাউন করে থাকলো।
খাতা দেওয়া শেষ করে, স্যার বোর্ডে গেলেন। গতকাল-ই  equation পোড়ানো শেষ করেছেন। আজ "Extra  sums" করানোর দিন। যখনি বই-এর কোনো চ্যাপ্টার শেষ হয়, উনি নিজের diary থেকে অঙ্ক করতে দেন।  এই ব্যাচ দিন দিন তার প্রিয় হয়ে উঠেছে। সতেরো বছর ধরে পড়াচ্ছেন কিন্তু এদের মতো নতুন অঙ্ক করার আগ্রহ উনি খুব কম-ই দেখেছেন আগে। যদিও বেশ কিছু ভালো ছাত্র আছে এদের মধ্যে, তাও ঋত্বিক , শ্রীজিৎ  আর সৌর্যর আলাদা একটা edge উনি দেখতে পান। আজ খাতা দেওয়ার সময় প্রথমেই ঋত্বিকের বিমর্ষ মুখ দেখলেন। খুব চঞ্চল এই ছেলে। উনি জানেন এই ছেলে আলাদা কিন্তু চাঞ্চল্য কন্ট্রোল করা এর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হবে জীবনে। কিন্তু এই নিয়ে এখনই চিন্তার কিছু নেই।  সময় মতো ছেলে সামলে নেবে ঠিক নিজেকে। একবার লাস্ট বেঞ্চের দিকে দ্খেলেন।  নাঃ! তিন জন-ই  বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। থার্ড বেঞ্চে বসা শ্রীজিৎকে দেখলেন একবার। মুখে পেন-এর পেছনটা ঢুকিয়ে রেখেছে। ওনার দিকেই তাকিয়ে আছে। উনি বোর্ড-এর দিকে ঘুরলেন। শিক্ষকতার চার্ম যেন আবার হঠাৎ অনুভব করলেন ।
স্যার যেই অঙ্ক লিখতে বোর্ড-এ গেছেন , অমনি সঞ্জীব এর কোমরে পেন দিয়ে রাহুল খোঁচা মারলো। বিরক্ত হয়ে পেছনে ঘুরলো সঞ্জীব। রাহুল দাঁত বের করে ওকে ভেঙ্গিয়ে বললো, "Zero ". সঞ্জীব সামনে ঘুরতেই যাচ্ছিলো, আবার ওর কোমরে খোঁচালো পেন দিয়ে। সঞ্জীব লাফিয়ে বসে পেছনে তাকাতেই রাহুল আস্তে করে হেসে উঠলো।
হাসির আওয়াজ শুনে স্যার পেছনে তাকালেন। চোখ সোজা গিয়ে পড়ল সঞ্জীবের ওপর। সাথে সাথেই মাথায় রক্ত উঠে এলো। উনি মারতে পছন্দ করেন না।  যাতে কারোর মনে অঙ্কের ভয় না তৈরি হয়, তাই ক্লাস-এ করানো একটা অঙ্ক-ও পরীক্ষায় দিয়েছিলেন।  এই ছেলেটা সেটাও পারলো না! আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না স্যার। টেবিলের ওপর diary-টা ছুঁড়ে ফেলে ছুটে গেলেন সঞ্জীবের কাছে। চুল-এর মুঠি ধরে বের করলেন বেঞ্চ থেকে।
টানতে টানতে নিয়ে এলেন ক্লাস-এর সামনে। ছেলে, মেয়ে-এর সামনে। মেয়েদের সামনে মার খাবে ভেবেই মাটিতে মিশে যাচ্ছিলো সঞ্জীব। তারপর শুরু হলো পৈশাচিক প্রহার। মাথার চুল ধরে এগারো বছরের বালকের দেহটা শুন্যে ভাসালেন কিছুক্ষন। তারপর নিজের বগল-এ সঞ্জীবের মাথা ঢুকিয়ে পিঠের ওপর বার দশেক কিল মারলেন। যারা শুরুতে  হাসছিলো সঞ্জীব কে স্যার মারতে আনছিলেন দেখে, এখন সবাই ভয়ে যবুথবু হয়ে সিঁটিয়ে গেছে।
পিঠে মার খাওয়ার পরেও সঞ্জীবের মুক্তি ছিল না।
"I will beat you black and blue", হুঁকার ছাড়লেন স্যার।  তার সাথে সঞ্জীবের দুই গালে থাপ্পড়ের বর্ষণ শুরু হলো।  অনেক্ষন নিজেকে চেপে রেখে এবার ভেঙে পড়লো সঞ্জীব। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে , মুখ দিয়ে আওয়াজ -ও হচ্ছে কান্নার।  কিন্তু আজকে রাহু ওকে কিছুতেই ছাড়ছে না যেন।  আরো কিছু চড় , কিলের পরে স্যার শান্ত হলেন।  "যা গিয়ে বস। নির্লজ্জ কোথাকার!" ধিক্কার দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন ওকে।  কাঁদতে কাঁদতে সঞ্জীব ফিরে এলো বেঞ্চে।  একবার রাহুল কে দেখলো। এখনো ওর মুখে মৃদু হাসি। কিছুই আর বুঝতে পারলো না সঞ্জীব।  মাথা নিচু করে নিজের খাতা ভেজাতো থাকলো।
স্যার কিছুক্ষন চেয়ার-এ বসে থাকলেন। হয়তো দম নিচ্ছিলেন। বিজয় সঞ্জীবকে দেখে খুব দুঃখ পেলো। স্যার-এর দিকে তাকালো। কেমন  যেন ভালো লাগল  না দেখে। স্যার-এর মুখ হতাশায় ভরা। পাশের বন্ধুরাও ভয়ে চুপ করে আছে। বিজয় নিজের খাতা বন্ধ করে বসে থাকলো। পাশ থেকে ঋত্বিক ফিসফিস করলো, "কি রে , আজ আর অঙ্ক দেবে না ?" কোনো কথা বললো না বিজয়। নিঃস্তব্ধ ক্লাসে হঠাৎ নিঃস্বাস ফেরানোর মতো করে ঘন্টা পড়লো।  স্যার উঠে বেরিয়ে গেলেন।
সবাই সঞ্জীবের দিকে তাকালো। সঞ্জীব নিজের পাশে বসে থাকা মৌদুদের দিকে ফিরলো। সাথে সাথেই পেছন থেকে রাহুল বললো , "sorry ভাই, আমার দোষ। " মৌদুদ বড় বড় চোখ করে রাহুল কে বললো, "এর পরের বার আমিই  তোকে মারবো। " সঞ্জীব মুখ টিপে হাসলো একবার।
লাস্ট বেঞ্চ থেকে ঋত্বিক এসব দেখছিলো। ওর দুই বন্ধু trump কার্ড খেলতে ব্যস্ত তখন।  বিজয় ডাকলো ওকে, "কি রে শুরু কর। "
ঋত্বিক বললো, "একটাও অঙ্ক করা হলো না আজ। "
সৌর্য নিজের কার্ড তা সামনে ফেলে বললো, " কি পেটালো রে ভাই!"
বিজয় "হুঁ " বলে নিজের কার্ড নামালো।
এই কার্ড খেলা এদের নিত্য দিনের নেশা। ক্লাসের মাঝে ফাঁক পেলেই তিন হন এই করে প্রতিদিন। লাঞ্চ-ব্র্যাকও এই ভাবেই কাটে। খেলতে খেলতে সৌর্য একবার  তনয়ার দিকে তাকালো। সেকেন্ড বেঞ্চের ডান সাইড-এ boy-কাট চুলের একটি শ্যামলা মেয়ে। কটা চোখ , ছোট্ট ঠোঁট আর অপূর্ব হাসি।  ইদানিং মাঝে মাঝেই ওর দিকে তাকায় সৌর্য। কেউ জানে না।  লাস্ট বেঞ্চের কোনায় বসার সুবিধা। তনয়া কে দেখলে কেমন একটা চঞ্চল মনে হয় নিজেকে সৌর্যর। মাঝে মাঝে তনয়ার  সাথে চোখ মিলে যায়। তখন সেই চাঞ্চল্য আরো বেড়ে ওঠে ,এক-ই সাথে মনে হয় মাটিতে মিশে গেলে ভালো হত।  এসব ও ঋত্বিক আর বিজয়কে বলতে চায়না।  নিজেই বোঝে না এরকম কেন হয়। কিন্তু কি যে নেশার মধ্যে ও পড়েছে! রোজ স্কুলে আসে শুধু ঐ চোরা দৃষ্টির আশায়।
বিজয় দেখলো সৌর্য অন্য-মনস্ক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। একবার পেটে খোঁচা মারতেই সৌর্য নিজের দান দিলো। একটু অদ্ভুতই ঠেকলো বিজয়ের কাছে।
এর মধ্যে পরের ঘন্টা বাজতেই ক্লাসে ইংরেজি ম্যাডাম ঢুকলেন। তাঁর হাতে এক গোছা উনিট টেস্ট -এর খাতা। তাই দেখে ঋত্বিক কার্ড গুলো পকেটে ঢুকিয়ে দিলো। এইবার আয় কোন ব্যাটা আসবি!

No comments:

Post a Comment

বন্ধু

 ভোর-রাতে, নিঃশব্দে সময় এসেছিল পাশে  জীবনের কিছু ক্ষণ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে । হাতে হাত, পুরোনো দুই বন্ধুর দেখা বহুদিন পর; হঠাৎ করেই খুঁজে...