Sunday, July 31, 2016

Premer Kobita?

প্রেমের কবিতা লিখতে বলছো মালবিকা?
কিন্তু তাতে আমি যে অক্ষম, অজ্ঞ।
যে মানুষ ভোরের কিরণে ভেজে না,
সে আর প্রেম কি বুঝবে বলো?
আমার ঘুম ভাঙে সাঁঝের মাঝে ,
কবিতার সাক্ষরতা কি আমায় সাজে?

যখন তুমি ঘুমিয়েছো, সেই স্বপ্নে আমি
পাল তুলেছি নৌকায়, ঝরের আশঙ্কায় ;
তবে প্রেমে ঝর নিয়ে তো কত লেখা,
কিন্তু তুমিতো বাতাস খুঁজেছো!
তাই আমি কবিদের দলে ভিড়লাম না
সবাইকে কই মানায় প্যাশনের বিলাসিতা?

Aagun

বিচার করতে বসেছো আমার?
কোথাকার এক কাঠের আদালত
সে করবে শুকনো বারুদের বিচার !
আগুনের গল্প শুনেছ, দেখোনি সামনে
নাহলে এত সুড়সুড়ি দিতে না হাওয়ায়
ছাই-এর দাগ মাখানো এই হাতের পাতায়।

নদীর জল আমায় স্নান করায় না
স্নিগ্ধ যা কিছু, হারিয়েছি বহুদিন
আর যে পুঁথি পড়ে শিক্ষার অহংকার
সেই রূক্ষতাও আমার সম্বল
যে মেঘে বৃষ্টি নেই, সে আমার নয়
এই আগুন তৈরি বর্ষার জন্য!

সেই বর্ষা দামামা বাজিয়ে আমায় ভাঙে
আমায় চূর্ণ করে মিশিয়ে দেয় মাটিতে,
মেলায় আমারই পোড়ানো ইতিহাসে!
আমায় তুমি শাস্তি দেবে কি?
পথ চলো কিছুটা আমার সাথে
কল্পনার তাপ, কিছু তোমায়ও যাক ছুঁয়ে।

Friday, July 29, 2016

Gawrjon

আকাশের ছিন্ন ভিন্ন মেঘ গর্জন করে না
যে আওয়াজ তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিফলিত
সে গর্জন আমার! বৃষ্টির কথা বলছো?
এক দু ফোটা জল মানেই বর্ষা না, কবে  বুঝবে?
বর্ষা তোমার নিংড়ানো আমার ঘামের কাপড়!
যে কালো মেঘের গান গেয়ে ভুবন মাতিয়েছ ,
আমি সেই গানেরই সুর, আজ বাদলা হাওয়ায় কেটে গেছি।
তা কি যেন বলছিলে? প্রেম? নাম? অন্তর?
কাব্যি করো না বেশী! সময় নেই অডিশনের।
বাজ পড়ছে , যে শব্দ তোমার ভীতির উৎস
তার পালঙ্ক আমি , সব তেজের এখানে নয় বহিঃপ্রকাশ।

Khawrosrota

যুগান্তর বোঝো কমলিকা? উত্তাপ? তেজ?
তোমার শুরু ও শেষের মাঝে যৌবনের ভাঙ্গন
যারা ফসলের আশায় বর্ষার অপেক্ষা করেছে
তাদের একুল-ওকূল সবই আজ ঘোলাটে !
কোন সমুদ্রে যাচ্ছ, তা তুমিই জানো।
রূক্ষ কিছু বাস্তবের তুমি ছিলে ঝর্ণা
কবিতার খাঁজ তৈরি হয়েছিল তোমারই আঁকে-বাঁকে
সে কবিতা চলমান উত্তর-দক্ষিণ মাধ্যাকর্ষণ বিমুখ
আর পূর্ব -পশ্চিম সময়ের শিথীল কণিকা !
স্নানরত বালক, বৃদ্ধ , পশু সেই ঝর্ণার ফেটে যাওয়া সাদা।
কেউ বলেছিলো সংযম মহৎ ; আমি বলি অবুঝ
ফসল ফলে আশ্বিনে , স্নিগ্ধ নীল আর সবুজ। 

Tuesday, July 26, 2016

Jilipi

আজকাল বই -এর ফাঁকে প্রাক্তন প্রেমিকা  বা ক্রাশ -এর দেওয়া চিঠি পাওয়া যায় না। জিমেইল নামক বস্তুটি স্মৃতির reservoir -এর কাজ করে। পুরোনো এক ক্রাশ-এর সাথে কথপোকথন পড়লাম কিছুক্ষন। ছোটবেলার নিজেকে একদমই বেমানান লাগে এসব ঘাটলে। জীবনে ভালো লেগেছে কত  নারীকে। এক সময় জেদ ছিল এক জনের সাথেই সমস্ত জীবন কাটাবো।True Love যাকে বলে আরকি। কিন্তু এক এক করে আমার মনে মহিলারা বাড়তে শুরু করলো। এখন বুঝি আমি মানুষটা  এরকমই। সরল , কাব্যিক , স্বপ্নালু। তবে আমায় মেয়েবাজ আখ্যাটা কেউ সহজে দিতে পারবে না। একাই থাকি , বিরক্ত হলেও desperate হয়ে কাউকে স্টক করিনা। যাই হোক , পুরোনো ক্রাশ-এ ফিরি।  দেখলাম এই মেয়েটি আমায় বলেছিলো যে ওর জীবনে ইনস্পিরেশন ভীষণ ভাবে মিস করছে। কি আজেবাজে reply দিয়েছিলাম তখন সেটা আর খেয়াল নেই। কিন্তু আজ ওর কথাটার মানে আমার কাছে অনেকটাই স্পষ্ট। কাল রাতেই এক বান্ধবীকে নিজেই এই কথা বলেছি যে আমার জীবনে কোনো ইনস্পিরেশন-ই বেশী দিন স্থায়ী হয় না। হয়তো relapse করে , কিন্তু সব কটার-ই একটা লোকাল মেয়াদ থাকে। চিরন্তন হয়ে ওঠা ইনস্পিরেশন বড়-ই  কম। মানুষের মন ভিন্ন জিনিস খোঁজে। কেউ তাই মনে করে জীবনে সাফল্য পাওয়াই সব , কেউ শান্তি চায়, কেউ আবার ভালোবাসা (অশান্তি মেশানো ) , কেউ excellence . বস্তুত: আমার কোনোটাই প্রয়োজন নেই। বয়সের সাথে স্বপ্নগুলো ক্রমশই ফিকে হয়ে যাচ্ছে।মাতব্বরের মত সবাই মনে করে যে তারা বোঝে জীবনের ঠিক পথ কোনটা। অন্যকে যা নিয়ে directly /indirectly criticize করে , নিজেদের মধ্যেও যে এক-ই চরিত্র বাসা বেঁধে আছে, তা জেনেও অস্বীকার করে। কিসের যে ভয় এতো মানুষের! মুখে সমাজসচেতন বুলি কিন্তু ভেতরে সব কিছু নিংড়ে কন্ট্রোল করার আদম্য ইচ্ছে। সব ইমোশন-এই যেন পেস্টিসাইড মিশে গেছে।
পুরোনো প্রেমিকা আর পুরোনো ক্রাশ-এর বোধয় একটাই তফাৎ।একজনকে ঠিক পুরোনো বলা যায়না। কখনোই। প্রেম উড়ে যায় যে সকল মানুষের , সমাজ তাদের গালাগালি দেয় বটে কিন্তু এই সমাজ-ই আবার সন্যাসীদের পূজো করে! তা করুক। পিছুটান না থাকা পূজ্য তো বটেই। আমার সেই ক্রাশ এও বলেছিলো, যে কিছু কিছু ভালোবাসা না পাওয়াই ভালো। তার মধ্যেই নাকি রোম্যান্স  থাকে। এসব ফালতু কথা। রোম্যান্স দু তরফা না হলে ঠিক জমে ক্ষীর হয় না। মাঝেই ছানা কেটে যায়। এবার কার ছানা ভালো লাগবে আর কার ক্ষীর , তা তো ব্যাক্তিগত স্বাদ নির্ভরশীল। কার দেহে কত sugar , সেই মাপ মত তার খাদ্য চার্ট হওয়া উচিৎ। কিন্তু প্রেম তো জিলিপি , প্যাঁচ আর রস দুটোই মানুষকে আকৃষ্ট করে। তখন আর ডায়েটিং কে করতে পারে! এই যে আমার বন্ধু সাহেব , নিত্যদিন নতুন প্রেমিকার ছোঁয়া পায় (তা মনেই হোক বা অন্য স্থানে ) তা দেখে আমার যে একেবারেই হিংসে হয়না তা বললে ডাহা মিথ্যা বলা হবে। কিন্তু এই হিংসে /দু:খ ক্ষণস্থায়ী। ঠান্ডা জিলিপির প্যাঁচ তো আর সুস্বাদু না! তাই আমি ব্রড স্কেলে মনে করি যে ভালোই আছি। আমি কারোরটা মারছি না, কেউ আমারটা মারছে না। নেগেটিভ-এর 'গুনে' আদতে পসিটিভ আউটকাম-ই হচ্ছে। এখানে বুঝিয়ে লেখা দরকার পসিটিভটা কি। এটা ভাবলে ভুল হবে যে প্রেম থেকে দূরে থেকে আমি শান্তি প্রত্যাশা করছি। বস্তুতঃ আমি শহীদ মিনারের মাথা থেকে আমাদের সকলের প্রিয় চৌরঙ্গী পথটা লক্ষ্য করতে পারছি। অনেক্ষন খেয়াল করলে তবেই একসিডেন্ট দেখা যায়! একবার হয়ে গেলে সবাই দেখতে পায়। কিন্তু কি করে হলো , তা জানতে গেলে মশাই সিঙ্গেল থাকা কম্পালসরি!
এই লেখার প্রথম ও দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফ ভিন্ন মুডের হওয়ায় দয়া করে কমপ্লেইন করবেন না। আপনি যদি আমায় চেনেন, তাহলে জানবেন আমি আপনার কমপ্লেইন করা গায়ে, থুড়ি লেখায় মাখাই না। আমায় এর জন্য আপনার "পাকা" মনে হতে পারে। কিন্তু কি জানেন তো, পাকামো আমায় মানায়। পোঁদপাকা তো আর নই। তাই মন দিয়ে জিলিপির স্বাদ উপভোগ করুন।

ইতি,
তাওয়ার নিচের আগুন। 

Monday, July 25, 2016

Deconfined editorial

It is funny how latent and talent are anagrams. Science and literature enjoy a quiescent relationship in our lives.  History cites countless examples of the blending of these two disciplines . H. G. Wells' view of the society through the eyes of The Invisible Man, Tagore letting loose a relativity reference in শেষের কবিতা (The Last Poem)George Orwell's then-futuristic-now-relevant drama 1984 are a few noteworthy mentions where the epitomes of one field embraced the other to drive home social messages for the betterment of humanity. Yet, given the potential that remains trapped in the unused synaptic junctions, the union of Science and Literature has a long journey ahead.
Research Fellows Association (RFA) of Saha Institute of Nuclear Physics (SINP) is launching a new magazine with one simple motto : Explore, Expand, Engage.
Through this magazine we hope to speak, think and question. We are probably lucky to be born in a country which allows for the debate on freedom of speech. It is thus our responsibility as the intelligentsia to contribute to this culture. We thus encourage you to dive deep into yourselves and seek out the not-so-logical emotions that drive both science and humanity. We want you to look beyond yourselves and get lost in the unknown world of others for in empathy lies the soul of knowledge. We want cultures and languages to collide. We want to break free from any convention that a magazine is supposed to have. In these collisions, we will only lose the barriers. But through the impact, we dream of union; a union of ideas!
The first issue of your magazine, though plays a satirical joke on the previous paragraph. We have restricted the authorship only to research fellows of SINP. Yet, the response has been overwhelming, given the fact that the magazine has been launched at a very short notice. True to our aim, the magazine, through its modest footsteps has already broken the language barrier! In the next issue, we welcome inputs from everyone. By this we mean Everyone!
Wherever you work, whatever you do, whomever you are, we welcome you!

We would also like to add a few notes for those who would carry the magazine forward. The aim, at present, is to publish a new issue every three months. We do understand the responsibility we have signed up for. The Editorial Board will have new faces in the coming months. Morning necessarily shows the day at SINP. The response to this magazine promises a new day. We hope You, as the blood of SINP will build on the start and ensure that it reaches the heights it is supposed to.

With this beacon of hope, we introduce you to the Deconfined world!

Wednesday, July 20, 2016


             স্রোত


ক্লান্ত চোখ , শূন্য মাথা আর হারানো কিছু সুর
খোলা খাতা, ঝিম ধরা পায়ের পাতা, আদ্র বুক
বেখেয়ালে মানে খুঁজতে চাইছে উত্তরের
যে উত্তর আজ দক্ষিণগামী , স্রোতের  দাপটে।

Tuesday, July 12, 2016

Modhyaranya-I

রণজয় চ্যাটার্জী। বয়স একত্রিশ। রং তামাটে , চোখে রিম-হীন চশমা , গাল ভরা আবছা দাঁড়ি, যদিও গোঁফ ও থুতনির কাছে বেশ গাঢ়। হাতে খোলা আছে পি জি উডহাউসের "সামার লাইটনিং " কিন্তু ওর দৃষ্টি কাঁচের জানালা পেড়িয়ে চলে গেছে বহু দূরে, অন্যমনস্কতার কোন গভীর কক্ষ্যে। হঠাৎ-ই কোন সহযাত্রির ক্ষীণ কণ্ঠস্বরে রনজয়ের চেতনা ফিরে এলো। AC কম্পার্টমেন্ট হওয়ায় লোকের সংখ্যা কম। চেয়ার-কার সিট। প্রায় পুরো কামরাই খালি।অনেক দিন কোনো নতুন গল্প লেখেনি রণজয়।মাথায় ছোট্ট ইডিয়া আসছিলো।কিন্তু সেটাও ভেঙে গেলো এখন। রণজয় ঘড়ি দেখলো একবার রাত ১১টা। উপকূল এক্সপ্রেস ছুটে চলেছে চেন্নাই-এর লক্ষ্যে। ট্রেন লেট করেনি আজ একদম-ই। আর পনেরো মিনিটেই জজপুর রোড স্টেশন আসবে। রণজয় কে নামতে হবে এখানেই। শুভদা বলেছে স্টেশনে গাড়ি থাকবে। সেই গাড়ি করে আরো ১২০ কিমি গেলে তবে কেওনঝর পৌঁছাবে। শুভদা আর রণজয় এক বছরের ছোট বড়। রনজয়ের পিসির ছেলে শুভদা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের এক নামজাদা নবরত্ন কোম্পানিতে চাকরি। বিয়ে করেছে বছর পাঁচ আগে। দু বছরের মেয়ে ঈশিতা, মায়ের সাথে কলকাতায় থাকে। শুভদার লাভ marriage . স্কুলের প্রেম। ঋতুপর্ণা ছিল শুভদার দু ব্যাচ সিনিয়র। রঞ্জয়ের মনে আছে যখন বাড়িতে এই সম্পর্ক মানতে নারাজ , তখন রণজয়-ই এই পরিণয়ের কান্ডারি হয়েছিল। বাসর ঘড়ে যখন বয়স নিয়ে বড়দি খোঁচা মেরেছিলো ঋতুপর্ণাকে , তখন -ই  তো  সেই  বিখ্যাত উক্তিটি করেছিল ঋতুপর্ণা , "I love falling for younger men". বড়দি আর একটা কথা-ও বলতে পারেনি উত্তরে।
সেই বিয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেছে। সময় কিভাবে বয়ে চলে ; তার স্রোত শুরুতে টলটলে, কিন্তু শান্ত হলেই ঘোলাটে। নিজের জীবনের সম্পর্কগুলো ভেসে উঠলো রনজয়ের সামনে। তখনই ট্রেন-ও ঢুকলো জজপুর স্টেশনে। সাথে ছোট্ট একটা ব্যাগ শুধু রনজয়ের। আজ শুক্রবার , পর্শু ফিরে যাবে কলকাতায়। সোমবার অফিসে না গেলেই নয়। ব্যাগ পিঠে চাপিয়ে নেমে পড়লো ট্রেন থেকে। ছোট স্টেশন , এই মধ্যরাতে জন-শূন্য। রণজয় সোজা হেঁটে গেল স্টেশনের ভিতর। ফোনে কেবল হাত পড়েছে , ওমনি একজন বেঁটে মতো লোক এসে বললো , "আপনি রন বাবু আছেন কি?" রণজয় বললো , "হ্যাঁ , তুমি কি রাজকুমার ?" মাথা নেড়ে বেটে মানুষটা উত্তর দিল, "যি হাঁ। আমায় শুভ বাবু পাঠাইলেন। " আর প্রশ্নের প্রয়োজন বোধ না করে রণজয় বললো ," বেশ , চলো তাহলে। "
কম্পানি থেকে গাড়ি দেওয়া হয়েছে শুভদাকে।  এমন জায়গায় নাকি ওর পোস্টিং , যেখানে আর কোনো যানবাহনের দেখা মেলে না। প্রথমে এরম একটা জায়গার কথা শুনে খুবই উত্তেজিত হয়েছিল রণজয়। জন বসতি থেকে বেশ খানিকটা দূরে , পাহাড়ী জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত একটা ড্যাম। এই ড্যামকে কেন্দ্র করে একটি বাংলো , আট-দশটা কোয়ার্টার আর কিছু মাটির ঘর। বাংলোটি বরাদ্দ ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারের জন্য। শুভদা এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার। ওর থাকার ব্যবস্থা একটি কোয়ার্টারে। নিজের রান্না নিজেকেই করতে হয়। ছোটবেলায় পড়া অজস্র গল্পের কথা মনে পড়েছিল রনজয়ের। তাই অনেকদিন ধরেই এখানে ওর আসার ইচ্ছে ছিল। কাজের চাপে এতদিন সময় হয়নি। হয়তো শুধুই কাজের চাপ না। কলকাতায় ইদানিং মন, পা দুটো-ই  গেঁথে ছিল রনজয়ের। কিন্তু বারবার শুভদা ওকে আস্তে বলায় এবার ট্রেনের টিকিট কেটেই ফেললো। কিন্তু ট্রেনে বসেও যতই উত্তেজনা থাকুক না কেন , অন্ধকারে পাহাড়ী রাস্তায় চলতে চলতে একটু অস্বস্তি-ই  হচ্ছিলো ওর।
"বাবু আপনার কথা খুব বোলেন ", দেহাতি ভাষায় বললো রাজকুমার। এই অন্ধকারে লোকটা কথা না বলে গাড়ি চালালে রণজয় খুশি হয়। রাজকুমার আবার বললো, "হামনে শুনা হ্যা আপনারা দোনো একসাথে স্কুলে যেতেন। "
ড্রাইভারের আয়নায় তাকিয়ে রণজয় হাসলো। ও বুঝলো শুভ কথা বলার লোক পায়না। "হ্যাঁ, ঠিক-ই শুনেছ," রণজয় বললো। রাজকুমার যেন উৎসাহ পেয়ে গেলো, "বৌদি ওউর বেটীমনি আয়েথে কুছ হপ্তা আগে। "
ঋতুপর্ণা আর ঈশিতা এসেছে তিনবার এখানে। কিন্তু এই জনমানবহীন জঙ্গল ঋতুপর্ণার পছন্দ হয়নি একেবারেই। শুভদা নিশ্চই র বেশীদিন এখানে থাকবে না।  তাই তৎপর হয়ে রণজয় এসেছে এবার।
গাড়ি এবার পাহাড় পেড়িয়ে জঙ্গলে ঢুকলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার। রনজয়ের "অরণ্যের দিনরাত্রি" সিনেমার একটি দৃশ্য মাথায় এলো। এখন গা ছমছম করছে একটু। কোথাও কিছু দেখা যাচ্ছে না। হেডলাইটের জন্য রাস্তার ধারের গাছ গুলো যতটুকু বোঝা যাচ্ছে। রাজকুমার যেন পারল রনজয়ের মনে কি চলছে , "দাদাবাবুর  কি ডর লাগছে ?"
একটু বিরক্ত হয়ে রণজয় বললো, "কেন ভয় লাগার কি আছে ?" রাজকুমার হাসলো , "হামি বুঝি। আপনাদের শহরের লোকেদের এই রাস্তায় ডর লাগে। বাবু তো শাম কে বাদ নিকালতে হি নাহি !"
"ও! তোমার বাবু দেখছি খুব বীরপুরুষ। আমার ভয় তা একটু কম। আচ্ছা, একটা কথা বলো তো রাজকুমার। তোমার বাড়ি কোথায়? " রাজকুমার হেসে বললেন, " এই সওয়াল হামায় সবাই করে! হামার বাড়ি আছে পাকুড়ে। পাকুড় মালুম হ্যা বাবু?" রণজয় মাথা নেড়ে বললো, "হ্যাঁ, বাংলা-বিহার বর্ডার। রামপুরহাট আর ফারাক্কার মাঝে। তো তুমি এখানে ড্রাইভের হলে কি করে?" রাজকুমার আয়নায় চোখ রেখে বললো, "হাম কালকাত্তামে গাড়ি চালাতে থে। জিস বাবু কে লিয়ে চালাতে থে, উন্কা তাবাদলা হো গায়া ইহা। উনহনে বোলা কি হাম ভি উনাকে সাথ আয়ে , তানখা জ্যাদা মিলেগি। তবে সে হাম ড্যাম কে সাথ জুর গেয়ে। উও বাবু রিটায়ার হো গেয়ে পাড় হাম রেহে গেয়ে। "
ফোন বাজলো রনজয়ের। সেই নম্বর ! একটু বিরক্ত হয়ে রণজয় বললো "হুঁ বলো !" ওপারের কথা শুনে উত্তর দিলো, "তোমায় তো বলেছি কিছুদিন আমি break নিচ্ছি।  সময় হলে আমি-ই নয় তোমায় কল করবো ! এখন রাখছি। " কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিল।
হঠাৎ মেঘের গর্জন শোনা গেল। একটু আঁতকে উঠলো রণজয়। এই অরণ্যে আবার বৃষ্টি? উফ! তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারলে হয় এখন! "এদিকে কি বৃষ্টি হচ্ছে নাকি?" রণজয় জিজ্ঞেস করলো। "হাঁ বাবু। কুছ দিন সে বারিষ চল রাহি হে", রাজকুমার উত্তর দিল।  "কিতনা দূর হে ইহাসে?" রণজয় উদ্বেগ চেপে রেখে জিজ্ঞেস করল।  "অর কারিব বিস মিনিট," বললো রাজকুমার। রণজয় খেয়াল করল রাস্তায় কাদা বোঝা যাচ্ছে না। ও জিজ্ঞেস করল " শেষ কবে বৃষ্টি হয়েছিল?" রাজকুমার বললো, "কাল হুই থি বাবু।" আবার প্রশ্ন করল রণজয় "কাল কব? শাম কো?" রাজকুমার বললো, " নাহি দোপেহের। " রণজয় মনে মনে ভাবলো , তাহলে নিশ্চই আজ সারাদিন খুব কড়া রোদ উঠেছিল। এই ভাবতে ভাবতেই জোরে হাওয়া দিতে শুরু করলো। এবার ভেতরটা ছটফট করতে শুরু করল রনজয়ের। নতুন কোন কথা না বলে রণজয় সামনে তাকিয়ে থাকলো। গাড়ির স্পীডটাও যেন এবার একটু বেড়েছে। রাজকুমারও এই জঙ্গলে বৃষ্টির মধ্যে আটকা পড়তে চায়না বোঝা গেল। আর সাথে সাথেই নামলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।সাথে ঝোড়ো হাওয়া আর নিকটে বাজ পড়ার শব্দ। "আর কতদূর ভাই রাজকুমার ?" গলা এখন উৎকণ্ঠায় ভরা। বাজ পরে চলেছে একের পর এক। "বাস আগায়ে।"
ঝাঁপসা উইন্ডস্ক্রিন দিয়ে কিছু আলো দেখতে পেলো রণজয়। কাছাকাছি এসে বুঝলো , ওরা কিছু কোয়ার্টার পেড়োচ্ছে।  তারপর আস্তে করে গাড়িটা থামলো। "লি জিয়ে বাবু। পোহছ গেয়ে। "
ড্রাইভারের দরজাটা খুলতেই রণজয় দেখতে পেলো ছাতা সরিয়ে শুভদা মাথা ঢোকাচ্ছে গাড়ির মধ্যে।
"কি রে!" বলে এক গাল হাসল শুভদা। "কি দুর্যোগ নিয়ে এলি রে ভাই! ফোনটা সুইচ অফ কেন? আমি তো রাজকুমারকে কল করিনা রাতে গাড়ি চালালে। উফ চিন্তায় ফেলিস তুই চিরকাল!"
রণজয়  নিজের দরজা খুলতে যেতেই বাইরে থেকে রাজকুমার সেটা খুলে দিল। "আর বলিস না! সারা রাস্তা ভাবছি কখন পৌঁছাবো। গা হীম হয়ে এসেছিলো।" রণজয় গাড়ি থেকে বেড় হল।  ইতিমধ্যে শুভদা ওর কাছে পৌঁছে গেছে। ওর মাথায় ছাতাটা ধরে বললো, "ডিনার করতে মানে করেছিলাম। খাস নি তো? কষা মাংস আর লুচি আছে। ছোটবেলার মত খাবো চল।" রণজয় হালকা হেসে বললো "একটু খেয়েছি। ক্ষিদে পেয়েছিলো। তাও পেটে জায়গা আছে। " শুভদা হালকা হাসলো, "তুই অপেক্ষা করার ছেলে না আমি জানি।  চল এবার দাদার মনা রাখ। "
রাজকুমারের দিকে ফিরে বললো, "তাহলে কাল ১০টায় চলে এস। " রাজকুমার "জি" বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
রণজয় আর কিছু বললো না। দাদার সাথে ঘরে ঢুকে গেল।
স্নান করে খাওয়ার টেবিলে আসলো রণজয়। শুভদা আগে থেকেই বসে ছিল, একটা বৈজ্ঞানিক ম্যাগাজিন পড়ছিলো। রণজয় শুভদার দু  কাঁধে হাত রেখে বললো, "তোর বাথরুমটা বেশ বড় তো!" শুভদা হেসে বললো, "হ্যাঁ, এই পশু, পোকা মাকড়ের কিংডমে ঐ একটি মাত্র জায়গা মানব সভ্যতার প্রতীক বলতে পারিস।" তারপর একটু হেসে বললো, "নে, এবার বস। খাওয়া যাক। "
রণজয় শুভদার উল্টো দিকের সিটে বসলো।দেখলো, লুচি, পাঠার মাংস, ছোলার ডাল  আর ছানার তরকারি টেবিলে সাজানো। শুভদাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "এই এতো সব রান্না কি তুই করলি নাকি?" শুভদা হেসে বললো, "তুই কি পাগল? এখানে আমি ছাড়াও তো অন্য মানুষ থাকে। আমায় ইদানিং প্রায় রান্না করতেই হয় না। আমাদের স্যার , উপেনদা, মানে যার বাংলোর কথা তোকে বলেছিলাম, ওনার স্ত্রী-ই এতো কিছু করেছেন।সুচরিতা বৌদি বেড়ে রান্না করেন।খেয়ে দেখ। " রণজয় খেতে শুরু করলো, সাথে শুভদাও। সত্যিই খুব সুস্বাদু। খিদেও পেয়েছিলো রনজয়ের। এমন কিছুই সন্ধ্যে বেলা খায়নি।শুভদাও পারে ! এতদিনেও জানে না যে রণজয় ট্রেনে কিছু খায় না। রণজয় সন্ধেবেলার খাওয়ার কথা বলেছিলো।আর তাতেই শুভদা ওকে কথা শুনিয়ে দিলো।তবে এখন আর সেই সব ভেবে সময় নষ্ট করলো না, জিজ্ঞেস করলো, "ওনারাও কি লুচি খেলেন ডিনারে ?"
"কারা?" শুভদা চোখ ছোট করে তাকালো।
"তোর স্যারের ফ্যামিলি। আবার কারা !"
"ও না  না , বৌদি তোর জন্য লুচি করেছেন। আমি বলেছিলাম করতে , তুই পছন্দ ক্রিস তাই। আর মাংসটা আমি কিনে আনলাম সবার জন্য।বলেছিলেন এক সাথে ডিনার করার কথা। কিন্তু আমি না করে দিলাম তোর দেরি হবে বলে। "
"সে ভালোই করেছিস। অচেনা লোকজনের সামনে আমার খেতে  অস্বস্তি হয়। "
"আরে ওনারা খুব ভালো।আমায় তো পুরো ফ্যামিলি বানিয়ে নিয়েছেন।আসলে আমি আসার আগে অন্য এক এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিল, কিন্তু সে তেমন মিশতো না নাকি।যাই হোক, সেই গল্প পরে হবে। আসল কথা হলো, আমায় এনারা খুব পছন্দ করেন। ইসি আর ঋতু যতবারই এসেছে, ওনারা ছিলেন না।"
"হুঁ " বললো রণজয়।
"ও হ্যাঁ , ঋতু তো তোকে ফোনে পায়নি।কি যে তোর মতিগতি। এই রাস্তায় সুইচ অফ কেউ করে? সে আমায় ফোন করে খালি জিজ্ঞেস করে তুই পৌছালি কিনা। আমারও টেনশন বাড়ছিল। "
"চার্জ ছিল না। তুই জানিয়ে দিয়েছিস তো ?"
"হ্যাঁ। "

খাওয়া শেষ করে দুজন শুভদার শোয়ার ঘরে যায়। ঘরের এক কোনে একটা টেবিল আর তার সাথে একটা চেয়ার। টেবিলের ওপর বেশ কিছু কাগজ আর বই-এর স্তূপ করা আছে। টেবিলের সোজাসুজি শোয়ার খাট। দরজার ডান পাশেই ড্রেসিং টেবিল। আয়নার কাঁচে ছোট দুটো লাল টিপ লাগানো।ভুঁরু কুঁচকে সেদিকে দেখলো একবার রণজয়। খাটের ওপর একটা ল্যাপটপ, দুটো বালিশ আর দুটো চাদর রাখা আছে। দরজার বাঁ পাশে একটা আলনা , যাতে জামা কাপড় ঝুলছে , তার পাশে একটা মাঝারি সিজি এর আলমাড়ি।টেবিলের পাশের দেওয়ালের মাঝামাঝি কাটা মস্ত এক জানালা।শুভদা খাটে বসে বললো, "কাল সকাল দশটা নাগাদ আমায় একবার সাইটে যেতে হবে। ফেরা সেই রাতে।তুই কি আমার সাথে জাবি? নাকি জঙ্গলটা ঘুরে দেখবি? ড্যামের লাগোয়া একটা ওয়ার্কারদের ছোট্ট গ্রামের মতো আছে। দেখে আস্তে পারিস। ফ্রিজে ভাত, দল আর মাংস থাকবে এমনিও যদি বাড়িতে থাকিস। "
শুভ মাথা নাড়লো, কিছু বললো না। জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বৃষ্টি অনেক্ষন থেমেছে।এই দিকটা পুরোটাই জঙ্গল।ডান দিকের কোনায় অন্য একটা কোয়ার্টার দেখা যাচ্ছে।
শুভদা বললো ,"এই জানালার পূবমুখী। ডান দিকে যেই বাড়িটা দেখতে পাচ্ছিস ওটায় আগের এসিস্টেন্ট ম্যানেজারটা  থাকতো।এই জানালা দিয়ে জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। অবশ্য মাঝে সাঝে কিছু শেয়াল দেখা যায়। "
রণজয় সাথে সাথে ফিরে তাকালো।ওর মুখ দেখে শুভদা হাসলো, "আরে ভয়ের কিছু নেই। শেয়াল আর সজারু আছে। এটা প্রটেকটেড এরিয়া। তবে ঘরে কিছু ঢোকেনা।"
রণজয় বললো ,"তুই নাকি সন্ধ্যের পর বাড়ি থেকে বেড়োস না? তোর  ড্রাইভার বললো। "
"ব্যাটার খুব মুখ চলে। গাড়ি নিয়ে রাতে আমি বাইরে যাই না। এলাকা তেমনও ভালো না। ড্যামের জন্য ইট , বালি , স্ক্রু , সিমেন্ট কত আমউন্টে আসে বুঝতেই পারছিস। স্মাগলিং-এর ঝামেলা ভালোই আছে এদিকে।রাতে গাড়ি নিয়ে যত কম চলা ফেরা করতে হয় তত ভালো।"
"টর্চ দেখলাম না তো। লোডশেডিং হয় না?"
"কি বলিস রে? ড্যামের পাশে লোডশেডিডিং? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোর? টর্চ পড়ার টেবিলেই আছে যদিও।"
লোডশেডিং-এর জন্য টর্চের কথা মোটেও তোলেনি রণজয়। একবার টেবিলের দিকে উঁকি মেরে দেখলো , দেওয়ালের পাশে টর্চ রাখা আছে।
শুভদা গায়ে একটা চাদর চাপিয়ে বললো, "তোর কি ঘুমানোর ইচ্ছে নেই?"
রণজয় হেসে বললো, "ট্রেনে ঘুমিয়েছি একটু।"
"প্রেম করছিস?"
একটু হতবাক হয়ে রণজয় শুভদার দিকে তাকালো ,"না। "
"সেটাই ভালো, যতদিন নাম না আসে , ভালো থাকবি।"
শুভদার দিকে তাকালো একবার রণজয়।চাদর ঠিক করতে ব্যস্ত।নিজের মনে একবার হাসলো আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।
"আমার তো কাল বেরোতে হবে ভাই। প্রায় ২টো বাজে।শুয়ে পড়। "
"তুই ঘুমা। আমি একটু টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে পড়ছি, ঠিক আছে। একটা গল্প বেশ ভালো জায়গায় আটকে আছে। "
"অলরাইট ! আমি-রাত্রি "
রণজয় হাসলো শুভদার দিকে তাকিয়ে।তারপর শুভদা শুয়ে পড়লে ও টেবিল লাম্প জ্বালিয়ে ঘরের টিউবলাইট নিভিয়ে দিলো।রনজয়ের উদ্দেশ্য মোটেও গল্পের বই পড়া ছিলনা। ও টর্চটা নিয়ে দেখলো বেশ ভালোই জোড় আছে। তিন ব্যাটারির টর্চ। শুভদার ঘুমের অপেক্ষায় ছিল রণজয়।জানালার সামনে দাঁড়িয়েই ও বুঝেছিলো, এই নীবিড় জঙ্গলের কোলে কোনো অদ্ভুত গল্প বাসা বেঁধে আছে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো রনজয়ের। এমন না যে ওর সাহস খুব বেশি।কিন্তু ও যা দেখেছিলো প্রথমবার, তা ওকে বড়ই চঞ্চল করে তুলছিলো।আবার খাটের দিকে তাকালো।শুভদা ঘুমিয়ে পড়েছে।আর সময় নষ্ট করা যায় না। 

Saturday, July 9, 2016

Vidyalay - Prothom parba


                                    বিদ্যালয় -প্রথম পর্ব


Prayer শেষ  হওয়া মাত্রই ক্লাস সিক্স এর ছাত্ররা attention পোসে ready  হয়ে দাঁড়ালো।  ক্লাস মনিটর এর নির্দেশে সবাই গুটি গুটি পা ফেলে তিন তোলার দিকে হাঁটা দিল। এদের কারোর মনে এখন ভয়, কারোর ঔৎসুক্য , কারোর হয়তো আবার বিরক্তি। প্রথম পিরিয়ড এই অঙ্ক ক্লাস। আজ উনিট টেস্ট এর খাতা দেবেন স্যার। দু মাস হয়েছে এরা সবাই সেকেন্ডারি সেক্শন এ উঠেছে। এই কয়েকদিন আগেও যারা নিজেদের সব থেকে বড় মনে করতে, হঠ্যাৎ -ই গত দু মাসে সব উল্টে যাওয়ার সাথে মানিয়ে নিয়ে পারছে না। ললিত মোহন আদর্শ বিদ্যালয় এর ছাত্ররা আমাদের এই গল্পের বর্তমান নায়কবৃন্দ। এই বিদ্যালয়টি স্হাপিত হয় ঊনিশশো ছিয়াত্তর সালের ষোলোই ফেব্রুয়ারি। পশ্চিম বাংলার পূর্ব কোনে সময় এর সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে ওঠা শান্ত শহর বালুরঘাট।  বড় অদ্ভুত লোকেশন এই ছোট্ট শহর এর। তিন দিক দিয়ে বাংলদেশ এর বর্ডার  ঘিরে রেখেছে এই শহরকে। উত্তর-পশ্চিম দিকের দরজা খোলা ভারতের দিকে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই খুব কাছে BSF ক্যাম্প স্থাপন করে ভারতীয় army পতিরাম নামক এক ছোট্ট গ্রামে (এই ছোট্ট গ্রামের-ই  ছেলে ভারত বিখ্যাত, মাথামোটা কিন্তু সুমধুর গায়ক অভিজিৎ ) ।  নিকটে BSF থাকার সুবাদে বালুরঘাট এর বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ দিলীপ ধর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট  কে আর্জি জানান এই শহরে CBSE স্কুল চালু করতে। বেশ কিছু জল ঘোলার পর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট পার্মিশন দেয় স্কুল চালু করার। প্রথমে প্রাইমারি , তারপর প্রগ্রেস বিচার করে ক্লাস এইট অবধি পোড়ানোর পার্মিশন আসে। ধীরে ধীরে ক্লাস টেন  ও টুয়েলভ খোলার অনুমতিও চলে আসে। দু বীঘা চাষের জমি কিনে স্কুল এর প্রথম বিল্ডিং শুরু।  সময় এর সাথে ক্লাস এবং ছাত্র দুটোই বাড়ে। তাই নতুন বিল্ডিংও গড়ে ওঠে পুরোনো বিল্ডিং এর পাশে। পুরোনো বিল্ডিং এ ক্লাস হয় নার্সারি থেকে ফাইভ।  সিক্স থেকে টুয়েলভ নতুন বিল্ডিং।
অগত্যা বোঝাই যাচ্ছে যারা ক্লাস ফাইভে এ ছিল দাদা, তারাই এখন  সব চেয়ে ছোট হওয়ার  আখ্যা পাচ্ছে। Teacher রা তো বটেই, দাদা দিদিরাও এদের শুধু তাচ্ছিল্যই  করে। এই দু মাসে এগারো বছরের বাচ্চা রা নিজেদের আবার ছোট ভাবতেই শুরু  করেছে। হয়তো কেউ কেউ করেনি। ইতিহাস হয়তো এদের মধ্যেই অনেক leader খুঁজে পাবে। হয়তো অনেকে হারিয়ে যাবে বাস্তবের যাঁতাকলে। কিন্তু আপাততঃ আমরা বর্তমানে। আর বর্তমান-ই সব চেয়ে মধুর।
এক এক করে ছাত্ররা ক্লাসে ঢুকলো। ক্লাস মনিটর মৌদুদ হোসেন লম্বা চেহারার।  হোস্টেলে  থাকে। এর বাড়ি ফারাক্কায়। হয়তো ক্লাসের  বাকিদের থেকে এক দু বছর বড় বলেই চিরকাল মনিটর হয়ে এসেছে। মৌদুদের সাথে কেউ তর্কে যায় না। মৌদুদ-ও কারোর ওপর দাপট দেখায় না। কিন্ত ক্লাসে অনিয় হলে  মৌদুদ স্যারদের নালিশ করতে একটুও সময় নষ্ট করে না। তাও সবাই চেঁচায় , মার খায়, কাঁদে , আবার একই জিনিস করে। নিজের  ক্লাসে র কে বোরো, কে ছোট, কে দাদা, কে ভাই ! সবাই সবার ঘারে হাত  দিতে পারে। অন্য কোনো সম্পর্কেই যা  পারা যায় না।
মৌদুদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে teacher  আশা অবধি।   ওকে  ঢুকতে দেখেই সবাই চুপ করে বেঞ্চে পড়ে।  প্রথম ক্লাস ম্যাথেমেটিক্স।  অঙ্ক স্যার ঢুকলেন : চোখে চশমা, এক হাতে ডাস্টার আর অন্য হাতে diary. ইনি রোগা, লম্বা , মাথার চুল পাতলা কিন্তু ঘার অবধি পেঁচিয়ে পড়েছে। হাতের জিনিসগুলো teacher এর টেবিলে রেখে বললেন , "মৌদুদ , যা তো আমার ডেস্ক থেকে ইউনিট টেস্ট এর খাতা গুলো নিয়ে আয়। "
এই নিয়েই prayer লাইনে ভয় ছিল কয়েকজনের। কি যে হবে? অঙ্ক পরীক্ষার খাতা দিয়েই শুরু হতে হলো? বাড়ি গিয়ে যে ক ঘা অপেক্ষা করছে কে জানে?
লাস্ট বেঞ্চে বসা তিন বালক তখন চারিদিকে বন্ধুদের দেখছে আর নিজেদের মধ্যে হাসছে।  এরা তিন জন হলো ক্লাস topper . আর দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে এদের বন্ধুত্ব শুরু। বেঞ্চের বাঁ সাইডে বসেছে ঋত্বিক , মাঝে বিজয় ও ডান পাশে সৌর্য।  ঋত্বিক ফর্সা,  চোখ সর্বদা চাঞ্চল্যে ভরা , মাথা ভরা কুচকুচে কালো চুল।  চেহারায় একটু মোটা কিন্তু হাত রোগা। বিজয় শান্ত প্রকৃতির , দেখেই মায়া আসে। ওকে দেখে মনে হয় লম্বা হবে বড়  হয়ে। স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে , নিজের মনে কি ভাবে ওই জানে।  ওর দুই বন্ধু ওর মতো গভীর এই বয়েসে হয়ে ওঠেনি। গায়ের রং সাদা, ছোট করে কাটা ঘন চুল মাথা ভোরে আছে। এখন অপেক্ষা করছে খাতা পাওয়ার।  ওর খালি মনে হচ্ছে দ্বিতীয় অঙ্কটা ভুল করেছে। যদিও ঋত্বিক ওর কথায় পাত্তা দেয়নি একটু আগেও । পাশে বসে দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সৌর্য।  ও জানে  দশে দশ পাবে পরীক্ষায়। ওর গায়ের রং তামাটে , চোখে হালে চশমা জুড়েছে।  মাথার চুল একটু বড় বাকিদের তুলনায়। সুন্দর কায়দায় আঁছড়ানো। দাদাকে দেখে গত বছর থেকেই পুশ-আপ আর রিং করতে শুরু করেছে সৌর্য। তাই ওর চেহারায় খাঁজ আর ভাজ উভয়-ই প্রকাশ পাচ্ছে।
মৌদুদ খাতা আনার সময়ে ক্লাসে attendance নিয়ে নেন স্যার। এর পর এক এক করে নাম ধরে ডাকতে থাকেন আর খাতা দিতে থাকেন। প্রথমেই লাস্ট বেঞ্চ থেকে তিন জন গিয়ে খাতা নিয়ে ফেরে। সবাই তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। এরা তো দশ পাবেই। কিন্তু একি! ঋত্বিক-কে যে দেখা যাচ্ছে ছলছল চোখে ফিরছে ! বাকি দুজনের হাসি দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে তারা দশ পেয়েছে।
সৌর্য আর বিজয় দেখলো ঋত্বিক-এর  খাতায়  বড়  করে আট দেখা যাচ্ছে। শেষ অঙ্কের লাস্ট স্টেপে  ভুল করেছে। ওরা জানে এই সময় ঋত্বিক কোনো কথা বলবে না।  বাড়িতে বকা খাওয়ার ভয়ে এখনই চোখে জল চলে এসেছে ওর। নিজের ভুলের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। বন্ধুদের দিকে তাকাচ্ছে না। চোখ তুলে বাকিদের মুখ দেখলো। মোটামুটি অনেকেই খুব খুশি।  তাহলে সবাই ওর থেকে ভালো করেছে প্রথম অঙ্ক পরীক্ষায়। নিজেকে অঙ্কে খুব খারাপ মনে হলো ওর।  অঙ্ক  বাজে। ইংরেজি খাতা দিক।  ও-ই  highest পাবে। ম্যাডাম তো বলেই দিয়েছেন যে কাউকে সহজে দশ দেবেন না।  ওর থেকে ভালো কেউ করবে না ঐ পরীক্ষায়, ও জানে। এসব ভাবতে ভাবতেই স্যারের গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।
"জিরো পেয়েছিস? আমি কি এতো বাজে পড়ালাম রে তোদের?"
ঋত্বিক চোখ তুলে দেখলো সঞ্জীব খাতা নিতে গেছে।  ফিক করে হেসে ফেললো ঋত্বিক।  তাকালো বন্ধুদের দিকে। সৌর্য -ও হাসলো ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু বিজয় হাসছে না।  কেমন করুন ভাবে তাকিয়ে আছে সঞ্জীবের দিকে। ওকে দেখে দুই বন্ধু একটু লজ্জা পেলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো  স্যারের বকা চুপচাপ শুনছে সঞ্জীব।
"নে  যা।  যা ইচ্ছে কর। পড়াশুনা করবি কেন ?" বলে খাতাটা সঞ্জীবের হাতে ঠেলে দিলেন স্যার।  সঞ্জীব মাথা নিচু করে গটগট করে ফিরে এলো নিজের জায়গায়। বাকি ছেলে মেয়েরা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে তখন। কিছুক্ষন হেড -ডাউন করে থাকলো সঞ্জীব।  নিষ্ঠুর বন্ধুদের ওপর রাগ হচ্ছিলো খুব। কিন্তু উত্তর কিভাবে দেবে? নিজের দোষেই তো আজ সবাই ধিক্কার দিচ্ছে ওকে।  সঞ্জীবের বাড়ি গঙ্গারামপুর-এ। হোস্টেলে থাকে। ক্লাস-এর ভালো ছাত্রদের পড়াতে বাড়িতে মাস্টার আসে, ও জানে।  ওকে পড়াতে কেউ আসেনা। স্কুল-এই তো পড়ানো হচ্ছে , আবার কে পড়াবে?
ক্লাসওয়ার্ক -এর খাতা বের করে টেবিলে রেখে আবার হেড-ডাউন করে থাকলো।
খাতা দেওয়া শেষ করে, স্যার বোর্ডে গেলেন। গতকাল-ই  equation পোড়ানো শেষ করেছেন। আজ "Extra  sums" করানোর দিন। যখনি বই-এর কোনো চ্যাপ্টার শেষ হয়, উনি নিজের diary থেকে অঙ্ক করতে দেন।  এই ব্যাচ দিন দিন তার প্রিয় হয়ে উঠেছে। সতেরো বছর ধরে পড়াচ্ছেন কিন্তু এদের মতো নতুন অঙ্ক করার আগ্রহ উনি খুব কম-ই দেখেছেন আগে। যদিও বেশ কিছু ভালো ছাত্র আছে এদের মধ্যে, তাও ঋত্বিক , শ্রীজিৎ  আর সৌর্যর আলাদা একটা edge উনি দেখতে পান। আজ খাতা দেওয়ার সময় প্রথমেই ঋত্বিকের বিমর্ষ মুখ দেখলেন। খুব চঞ্চল এই ছেলে। উনি জানেন এই ছেলে আলাদা কিন্তু চাঞ্চল্য কন্ট্রোল করা এর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হবে জীবনে। কিন্তু এই নিয়ে এখনই চিন্তার কিছু নেই।  সময় মতো ছেলে সামলে নেবে ঠিক নিজেকে। একবার লাস্ট বেঞ্চের দিকে দ্খেলেন।  নাঃ! তিন জন-ই  বোর্ড এর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। থার্ড বেঞ্চে বসা শ্রীজিৎকে দেখলেন একবার। মুখে পেন-এর পেছনটা ঢুকিয়ে রেখেছে। ওনার দিকেই তাকিয়ে আছে। উনি বোর্ড-এর দিকে ঘুরলেন। শিক্ষকতার চার্ম যেন আবার হঠাৎ অনুভব করলেন ।
স্যার যেই অঙ্ক লিখতে বোর্ড-এ গেছেন , অমনি সঞ্জীব এর কোমরে পেন দিয়ে রাহুল খোঁচা মারলো। বিরক্ত হয়ে পেছনে ঘুরলো সঞ্জীব। রাহুল দাঁত বের করে ওকে ভেঙ্গিয়ে বললো, "Zero ". সঞ্জীব সামনে ঘুরতেই যাচ্ছিলো, আবার ওর কোমরে খোঁচালো পেন দিয়ে। সঞ্জীব লাফিয়ে বসে পেছনে তাকাতেই রাহুল আস্তে করে হেসে উঠলো।
হাসির আওয়াজ শুনে স্যার পেছনে তাকালেন। চোখ সোজা গিয়ে পড়ল সঞ্জীবের ওপর। সাথে সাথেই মাথায় রক্ত উঠে এলো। উনি মারতে পছন্দ করেন না।  যাতে কারোর মনে অঙ্কের ভয় না তৈরি হয়, তাই ক্লাস-এ করানো একটা অঙ্ক-ও পরীক্ষায় দিয়েছিলেন।  এই ছেলেটা সেটাও পারলো না! আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলেন না স্যার। টেবিলের ওপর diary-টা ছুঁড়ে ফেলে ছুটে গেলেন সঞ্জীবের কাছে। চুল-এর মুঠি ধরে বের করলেন বেঞ্চ থেকে।
টানতে টানতে নিয়ে এলেন ক্লাস-এর সামনে। ছেলে, মেয়ে-এর সামনে। মেয়েদের সামনে মার খাবে ভেবেই মাটিতে মিশে যাচ্ছিলো সঞ্জীব। তারপর শুরু হলো পৈশাচিক প্রহার। মাথার চুল ধরে এগারো বছরের বালকের দেহটা শুন্যে ভাসালেন কিছুক্ষন। তারপর নিজের বগল-এ সঞ্জীবের মাথা ঢুকিয়ে পিঠের ওপর বার দশেক কিল মারলেন। যারা শুরুতে  হাসছিলো সঞ্জীব কে স্যার মারতে আনছিলেন দেখে, এখন সবাই ভয়ে যবুথবু হয়ে সিঁটিয়ে গেছে।
পিঠে মার খাওয়ার পরেও সঞ্জীবের মুক্তি ছিল না।
"I will beat you black and blue", হুঁকার ছাড়লেন স্যার।  তার সাথে সঞ্জীবের দুই গালে থাপ্পড়ের বর্ষণ শুরু হলো।  অনেক্ষন নিজেকে চেপে রেখে এবার ভেঙে পড়লো সঞ্জীব। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে , মুখ দিয়ে আওয়াজ -ও হচ্ছে কান্নার।  কিন্তু আজকে রাহু ওকে কিছুতেই ছাড়ছে না যেন।  আরো কিছু চড় , কিলের পরে স্যার শান্ত হলেন।  "যা গিয়ে বস। নির্লজ্জ কোথাকার!" ধিক্কার দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন ওকে।  কাঁদতে কাঁদতে সঞ্জীব ফিরে এলো বেঞ্চে।  একবার রাহুল কে দেখলো। এখনো ওর মুখে মৃদু হাসি। কিছুই আর বুঝতে পারলো না সঞ্জীব।  মাথা নিচু করে নিজের খাতা ভেজাতো থাকলো।
স্যার কিছুক্ষন চেয়ার-এ বসে থাকলেন। হয়তো দম নিচ্ছিলেন। বিজয় সঞ্জীবকে দেখে খুব দুঃখ পেলো। স্যার-এর দিকে তাকালো। কেমন  যেন ভালো লাগল  না দেখে। স্যার-এর মুখ হতাশায় ভরা। পাশের বন্ধুরাও ভয়ে চুপ করে আছে। বিজয় নিজের খাতা বন্ধ করে বসে থাকলো। পাশ থেকে ঋত্বিক ফিসফিস করলো, "কি রে , আজ আর অঙ্ক দেবে না ?" কোনো কথা বললো না বিজয়। নিঃস্তব্ধ ক্লাসে হঠাৎ নিঃস্বাস ফেরানোর মতো করে ঘন্টা পড়লো।  স্যার উঠে বেরিয়ে গেলেন।
সবাই সঞ্জীবের দিকে তাকালো। সঞ্জীব নিজের পাশে বসে থাকা মৌদুদের দিকে ফিরলো। সাথে সাথেই পেছন থেকে রাহুল বললো , "sorry ভাই, আমার দোষ। " মৌদুদ বড় বড় চোখ করে রাহুল কে বললো, "এর পরের বার আমিই  তোকে মারবো। " সঞ্জীব মুখ টিপে হাসলো একবার।
লাস্ট বেঞ্চ থেকে ঋত্বিক এসব দেখছিলো। ওর দুই বন্ধু trump কার্ড খেলতে ব্যস্ত তখন।  বিজয় ডাকলো ওকে, "কি রে শুরু কর। "
ঋত্বিক বললো, "একটাও অঙ্ক করা হলো না আজ। "
সৌর্য নিজের কার্ড তা সামনে ফেলে বললো, " কি পেটালো রে ভাই!"
বিজয় "হুঁ " বলে নিজের কার্ড নামালো।
এই কার্ড খেলা এদের নিত্য দিনের নেশা। ক্লাসের মাঝে ফাঁক পেলেই তিন হন এই করে প্রতিদিন। লাঞ্চ-ব্র্যাকও এই ভাবেই কাটে। খেলতে খেলতে সৌর্য একবার  তনয়ার দিকে তাকালো। সেকেন্ড বেঞ্চের ডান সাইড-এ boy-কাট চুলের একটি শ্যামলা মেয়ে। কটা চোখ , ছোট্ট ঠোঁট আর অপূর্ব হাসি।  ইদানিং মাঝে মাঝেই ওর দিকে তাকায় সৌর্য। কেউ জানে না।  লাস্ট বেঞ্চের কোনায় বসার সুবিধা। তনয়া কে দেখলে কেমন একটা চঞ্চল মনে হয় নিজেকে সৌর্যর। মাঝে মাঝে তনয়ার  সাথে চোখ মিলে যায়। তখন সেই চাঞ্চল্য আরো বেড়ে ওঠে ,এক-ই সাথে মনে হয় মাটিতে মিশে গেলে ভালো হত।  এসব ও ঋত্বিক আর বিজয়কে বলতে চায়না।  নিজেই বোঝে না এরকম কেন হয়। কিন্তু কি যে নেশার মধ্যে ও পড়েছে! রোজ স্কুলে আসে শুধু ঐ চোরা দৃষ্টির আশায়।
বিজয় দেখলো সৌর্য অন্য-মনস্ক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। একবার পেটে খোঁচা মারতেই সৌর্য নিজের দান দিলো। একটু অদ্ভুতই ঠেকলো বিজয়ের কাছে।
এর মধ্যে পরের ঘন্টা বাজতেই ক্লাসে ইংরেজি ম্যাডাম ঢুকলেন। তাঁর হাতে এক গোছা উনিট টেস্ট -এর খাতা। তাই দেখে ঋত্বিক কার্ড গুলো পকেটে ঢুকিয়ে দিলো। এইবার আয় কোন ব্যাটা আসবি!

Thursday, July 7, 2016

The wire

"Ektu aste katha bol", Rita spoke in a very serious tone.
Amit, who had gone to room 101 for collecting income-tax forms, was a little taken aback. Sure, he was asking in high decibels whether anyone in that room had access to the forms, yet something in Rita's tone seemed amiss. Yes, she was talking on the landline but the room was a large one! Someone standing at the door would have to shout so that the everyone could hear him. On learning that the forms were not in 101, Amit closed the door and headed back to his room. He was constantly plagued by her tone.
What is she thinking? Maharani naki?
He felt a little bad for himself. He had been wooing Rita for a couple of days and she had nicely adjusted herself on thin wire of giving in and not yielding. This was exactly the best thing Amit liked about romance. Any answer away from the wire meant the romance was over. But Rita's tone today was a little off-beat. In his head all he could see was Rita viewing him as just another preme pora admirer.
To hell with re-kindling romance with you!
He felt he must have lifted her a little too far from the ground in the last few days.
You are beautiful only if I write so about you.
He wanted to feel light. Rita had always been interested in him. He liked her too. But he could never fall for anyone who had already fallen for him. Thus he had always kept turning her down. Now it seemed that the wheel had turned.
No way! I haven't fallen for you.
He came back to his office and turned on Whole Lotta Love . Higher the notes reached, farther the heaviness went away.
Nah! I'm alright.

Amit lit a cigarette. What if all we needed was nicotine!

Friday, July 1, 2016

Boi

katha, aj boi er perono pata;
tomar, r amar. adou haat na pora
holde kagojer mishti gondhe
hajar hajar swabde bheshe beracche aj-o
na bola ahetuk laaj-e dhaka
joto bujhe neoya.

kobi seje kobi hote ami chaina
sorolipi na jene chaina gaite gaan
na chilo gola, na chilo chhondo
kintu chilo rupkathar gaynar baksho
se gayna aj amar swarthakata, ahonkar
raat er snigdho sparshe alor alonkar
samay kuriye rekheche ja chili tui
se boi amar, chapa akkhor gulo tui.

tate ache abdar, 
ache gaan, 
ache thakumar jhulir
tirthasthan.

বন্ধু

 ভোর-রাতে, নিঃশব্দে সময় এসেছিল পাশে  জীবনের কিছু ক্ষণ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে । হাতে হাত, পুরোনো দুই বন্ধুর দেখা বহুদিন পর; হঠাৎ করেই খুঁজে...