Friday, August 20, 2021

অপদার্থের পদার্থ - Equilibrium vs Non-equilibrium

বাড়তে বাড়তে বয়সটা এমন উঁচুতে পৌঁছে গেছে যে এখন পড়লে হাড়গুলো আর আস্ত থাকবে না। তখন সেই মাটিতে লুটানো দেহ থেকে মাংস খুবলে নেবে শৃগালের দল, বাতাসে মিশবে পচতে থাকা রক্তের গন্ধ, ক্ষীণ হয়ে আসবে সমাজের চেতনা; লুপ্ত হব আমি। 

আমি আর সমাজ; একজন system , অন্যজন environment . বিচিত্র এই জীবন! বিচিত্র এই চাঞ্চল্য! আমি পদার্থ বিদ্যার ছাত্র, তাই কিছু অপদার্থতার প্রমান ছেড়ে যাওয়া আমার কর্তব্য বলেই বোধ হয়। আমাদের উচ্চ-শিক্ষায় চাঞ্চল্যের এক ডাকসাঁইটে নাম আছে - Entropy . দার্শনিকদের অনেক ধারণার মধ্যে একটি ধারণা হল, এই মহাবিশ্বের চাঞ্চল্য/entropy  ক্রমেই বৃদ্ধিমান; এবং বিভজ্জিত দুই ভাগে - system-এর entropy এবং সমাজের। সমাজ থেকে যে চাঞ্চল্য system-এ ঢোকে, তাকে বলে entropy flow; এবং system -এর ভেতর তার জন্য নতুন করে যে চাঞ্চল্য তৈরী হয় (তথাপি সমাজে বিচ্যুত হয়), তার আনুষ্ঠানিক নাম - entropy production . যদি কোনো system equilibrium-এ থাকে, তাহলে অঙ্কের হিসেব বলে, তখন entropy production-এর মান শূন্য। কেন? System আসলে মায়াবী -তার অগুন্তি রূপ (configuration)- সারাক্ষণই যেমন আমরা এক রূপ থেকে অন্য রূপ নিয়ে নি - ঠিক তাই। Equilibrium-এ যেকোনো দুটি রূপের মধ্যে system সমান তালে রূপান্তর করতে পারে - সে তখন চাঞ্চল্যের শিখরে বসে থাকে - তাই নতুন চাঞ্চল্য তৈরী হওয়ার কোন সুযোগ তখন আর থাকে না। মনীষীরা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শান্ত হওয়ার টোটকা দিয়ে চলেছেন - আজকের পদার্থ বিদ্যার ভাষায় ভেবে দেখলে এটুকু বুঝতে পারি যে আর কিছু নয়, non-equilibrium বুঝতেই মানুষের এতো প্রাচীন সাধনা। 

ভাবছেন ঠাট্টা করছি? কি নিয়ে লিখতে শুরু করে হঠাৎ জ্ঞান ফলাচ্ছি? উদেশ্য সত্যি বলতে, কাছাকাছিই -জ্ঞান ফলানো নয় - ছড়ানো। সহজ ভাষায় আমাদের মতো কিছু উদাসীন মানুষের সারাদিনের ভাবনা আপনাকে বোঝানো - আপনি, যিনি আমাদের ভাবনা নিয়ে ভাবেন না কিন্তু প্রশ্ন করেন - আমরা কি করি ? একটু ধৈর্য নিয়ে বসুন, আপনার জন্যই লিখছি। 

এই যে সমান তালে রূপান্তরের কথা একটু আগে বললাম, এরও কিন্তু এক গম্ভীর নাম আছে - principle of  detailed balance . Equilibrium সর্বদা detailed balance মেনে চলে। Non-equilibrium এসব নিয়ম-কানুনের ঊর্ধে। সাধারণ, চলতি নিয়মের মাপদণ্ডে তাকে বোঝা শক্ত, ওই যেমন কিছু মানুষকে আমরা বলে ফেলি - "তুই এমনটা করতে পারিস তা আমি ভাবতেও পারিনি" - অনেকটা ওরকম। 

একটা সময় ছিল যখন মানুষ non-equilibrium বুঝতো current দিয়ে - যদি কোন system-এর মধ্যে দিয়ে current-এর চলাচল হয় -তাহলে সেই system equilibrium-এ থাকতে পারে না। এটা যুক্তি-যুক্ত কথা; current আছে মানে ক্ষয় আছে - ক্ষয় বা লাভ থাকা মানেই equilibrium নেই। যদি কোন system-এর মধ্যে ক্ষয় এবং লাভ একে-অপরকে cancel out করে দেয়, তাহলে তার মধ্যে দিয়ে গড়ে কোন current বইতে পারে না। তাহলে আর কি, সহজ ভাষায় মানুষ বলতে শুরু করলো, যে equilibrium হলো system-এর এমন অবস্থা যখন তার মধ্যে দিয়ে কোন প্রকৃতির current চলাচল হয় না। আর সত্য হাসলো; বিজ্ঞান হাসলো - খেলতে নেমেছো যার মাঠে, তার খেলা যে অত সহজ নয়! এমন এমন system আবিষ্কার হতে থাকলো, যার মধ্যে দিয়ে গড় current শূন্য অথচ তারা equilibrium-এর বাঁধাধরার বাইরে! ভাবছেন, কি ভাবে বোঝা গেল যে এরম অদ্ভুতুড়ে system equilibrium-এর বাইরে? ওই যে ভদ্রলোক, যিনি পেয়েছেন একটাই Nobel Prize কিন্তু পেতে পারতেন অন্ততঃ পাঁচটা - Albert Einstein, উনি দেখিয়েছিলেন যে কোন system যদি equilibrium-এ থাকে, তাহলে সে অবশ্যই কিছু সূত্র মেনে চলবে - যার মধ্যে প্রধান একটি সূত্র হলো - fluctuation-dissipation theorem. Equilibrium-এ থাকা একটি system-এর যেকোনো নির্দেশিকার গড়ের ধারেকাছে ওঠা-নামা এবং সেই system-এর শক্তির ক্ষয় একে-ওপরের সাথে এই fluctuation-dissipation সূত্র দিয়ে বদ্ধ।যদি কোন system এই সূত্র মানতে নারাজ হয়, তাহলে তার মানে একটাই - সে equilibrium-এ হয় পৌঁছয়নি, বা পৌঁছতে পারেনি।আর এই ভাবেই একের পর এক system আবিষ্কার হতে থাকলো, যারা গড়ে current-মুক্ত অথচ fluctuation-dissipation সূত্রও মেনে চলে না। যথারীতি non-equilibrium-ও দু'ভাগে ভাগ হলো -যে সব system-এ current আছে তাদের নাম দেওয়া হলো 'driven' (বাইরের কোন বল (force) দ্বারা  চালিত); এবং যাদের মধ্যে current নেই অথচ Einstein-এর সূত্র মানে না, তাদের বলা হলো, 'active' (নিজেই নিজেকে যে চালাতে পারে, বাইরের বলের যার প্রয়োজন নেই)।

এবার প্রশ্ন হলো, এই ধরণের system equilibrium থেকে কতটা দূরে থাকে? এই রঙীন hyperlink-এ click করলে তার ভালো একটি উত্তর পেতে পারেন। Equilibrium থেকে দূরত্ব - তার মানে কি? বরং সঠিক প্রশ্নটা করা যাক - তার মান কি? যাকে বলে, Quantification. আধুনিক research এই মান নির্ধারণেই রত; এবং এই মান লুকিয়ে আছে প্রধানত একটি নির্দেশিকায়, যার কথা আমরা শুরুতে আলোচনা করেছি - entropy production. এই entropy production-এর সঠিক সংজ্ঞা কি? তার সাথে detailed balance-এর গহীন সম্পর্ক কোথায়, এবং তা আদৌ কতটা ঠিক - তাই নিয়ে বিজ্ঞান মহলে তর্ক-বিতর্কের পালা চলছে বর্তমানে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের ওষুধ, প্রযুক্তি, ইত্যাদির চাবিকাঠি; লুকিয়ে আছে মহাবিশ্বের গভীরতম ইতিহাসের লেখন। তবে আজই আমরা সে পথে হাঁটবো না; একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক। 

ওই যে শুরুতে বললাম, বয়স বেড়েছে - আমার এবং আমার লেখার। জিরিয়ে না নিলে গন্তব্যে পৌঁছনো কঠিন হয়ে যায়।

2 comments:

বন্ধু

 ভোর-রাতে, নিঃশব্দে সময় এসেছিল পাশে  জীবনের কিছু ক্ষণ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে । হাতে হাত, পুরোনো দুই বন্ধুর দেখা বহুদিন পর; হঠাৎ করেই খুঁজে...