Sunday, May 5, 2024

প্রবাহ

ছোটবেলা থেকেই আমি নদীর বন্ধু। আমি তার স্রোতে শরীর ভেজাই না। তার শান্ত শব্দে ভেজে আমার মন। অনেকক্ষণ তাকে দেখলে, শুনলে তার ভাষা অনুমান করা যায়। বালুরঘাটে তার বুকে সূর্য নেমে আসত তাঁর সমস্ত তেজ বিলিয়ে দিয়ে। প্যারিস শহরের আর্তনাদ থাকতো তার বেঁধে দেওয়া ডাঙায়। কেমব্রিজে সে ক্লান্ত, বিজ্ঞানের ৮০০ বছরের অদম্য উচ্ছ্বাসে। লাক্সেমবার্গ দেশে সে শক্তি সঞ্চয়কারী এক শান্ত যুবক, যার ভবিষ্যৎ নিশ্চিৎ দুর্ভেদ্য পাহাড়ের মাঝে - নবমিলনের পথে।
ভুটানে আমি তাকে আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসতে দেখেছি। আবার শহরের কোনায় গুমরে, অবহেলায় বইতেও দেখেছি। আহ্লাদ - অবহেলার মিশ্রণে আমি তার নিশ্চুপ প্রবাহও অনুভব করেছি। 

আমি নদীকে প্রশ্ন করেছি, সে কেন সমুদ্রের পথে নিজেকে আটকিয়ে নেয় না। কেন মিষ্টত্ব বলিদান দিয়ে নোনা আবহাওয়ায় নিজেকে খুইয়ে ফেলে? নদী উত্তর দেয়নি। সে বয়ে গেছে। আমি সমুদ্রকে প্রশ্ন করেছি, কেন সে নদীকে এত টেনেও মিষ্টি থাকতে পারলো না, কেন নদীর অস্তিত্ব সে অবশিষ্ট রাখলো না? সমুদ্র কিন্তু উত্তর দিয়েছে।

আমি অস্তিত্ব রাখিনি? কার? আমি কি নিজেই তার অস্তিত্ব নই? আর আমার নোনাভাব? নদীই তো বয়ে নিয়ে এসেছে আমার মধ্যে, পৃথিবীর যত স্বাদ। আমি গ্রহণ করেছি। আমার কন্ঠ নীল। আমিই কালের নিয়মে মন্থিত হই, তোমার অমৃত মেঘ হয়ে আকাশে যায় ঈশ্বরের ঘরে; আর যাকে বিষ বলো, সেই নুন থেকে যায় আমার বুকের গভীরে। বিষ? আমার বুকেই প্রাণের সৃষ্টি, আর তোমরা বলো বিষ! যে নদীর মিষ্টত্ব রক্ষা করতে তোমার এত ভাবনা, সে মায়াবিনী। অস্থির, প্রবাহমান জীবন। সে আমার কাছে আসে স্থিরতার আশায়। 
অথচ, অস্থির আমিও। অস্থির সবাই। এই মহাবিশ্ব জীবিত। আমরা পাত্রমাত্র তার লীলা খেলায়।

No comments:

Post a Comment

বন্ধু

 ভোর-রাতে, নিঃশব্দে সময় এসেছিল পাশে  জীবনের কিছু ক্ষণ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে । হাতে হাত, পুরোনো দুই বন্ধুর দেখা বহুদিন পর; হঠাৎ করেই খুঁজে...