পড়ন্ত বিকেল। উঠতি বসন্ত। এমন সময় অর্জুন দেখতে পেলো নদীর পার দিয়ে সবুজ শাড়ী পরে একটি মেয়ে দৌড়ে তার দিকে আসছে। একটু অবাক হয়ে অর্জুন সেদিকে দেখতেই বুঝতে পারলো যে মেয়েটির পেছনে দৌড়চ্ছে একটি ৫-৬ বছরের শিশু। মেয়েটি তার সাথেই খেলা করছে। তারা দুজন অর্জুনকে পেরিয়ে আরো কিছুটা দূরে গিয়ে থামলো। অর্জুন এক দৃষ্টি তে তাদের দেখছিলো। মেয়েটির বয়েস আন্দাজ ২৫ হবে। গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ীতে তার রং যেন আরো ফেটে পড়ছিলো। সে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে তার দু গালে দুটো চুমু খেলো। অর্জুন দেখলো তার কপালে দুই ভুরুর ঠিক মধ্যভাগে কালো একটা টিপ্। বাচ্চাটিকে নিচে নামাতেই সে আবার ছোটার চেষ্টা করতে যাচ্ছিলো। মেয়েটি খপ করে তার হাত ধরে ফেললো। বাচ্চাটি প্রাণপণে মেয়েটিকে হাঁটানোর চেষ্টা করাতে মেয়েটিও পুনরায় অর্জুনের দিকে আস্তে থাকলো। মেয়েটির চোখ হয় স্নেহবৎসল হয়ে বাচ্চাটিকে দেখছিলো বা কোনো অজানার খোঁজে নদীর দিকে চাইছিলো। আরেকটু কাছে আসতে অর্জুন দেখতে পেলো তার ঠোঁটের রাঙা আভা। আরেকটু ভালো করে দেখতে সে বুঝতে পারলো যে মেয়েটির সম্পূর্ণ মুখটাই এখন রাঙা হয়ে আছে। সূর্য যেন তাঁর সমস্ত কিরণ দিয়ে অর্জুনের সামনে ওকে সাজিয়ে তুলেছে। মাঝে মাঝে মেয়েটি হাসছিলো, হয়তো ছোট্ট শিশুটির লম্ফঝমফে। মেয়েটির হাসিতে বোঝা যায় যে তার দন্ত অতি সুন্দর ও পরিপাটি হয়ে সাজানো। সে এদিকেই এগিয়ে আসছে তবু একবার সামনে দেখছে না কেন? চোখের নিচের পাতায় যেন কাজল তা একটু বেশি; সামনে আস্তে তার রং যেন হঠাৎ অর্জুনের মুখ তুলে তার চুলের ছটা দেখতে বাধ্য করলো - যেন বৃষ্টি এখানে লুকিয়ে আছে বলেই রৌদ্রের এতো যত্ন তার প্রতি। অর্জুনের সামনে এসে তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি একবার হাসলো। অর্জুন হাস্তে গিয়ে খেয়াল করলো যে সে এমনিই হাসছিলো! হঠাৎ খুব লজ্জা হক অর্জুনের। মেয়েটি সাবলীল ভঙ্গিমায় নদীর দিকে দেখতে দেখতে তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো। কোথা থেকে আওয়াজ এলো অর্জুন ঠিক বুঝলো না, কিন্তু বলে উঠলো, "আপনাকে এদিকে আগে কখনো দেখিনি।"
মেয়েটি ঘুরে তাকাতেই অর্জুন বললো, "নতুন এসেছেন?"
নিঃশব্দে হেসে মেয়েটি বললো, "আমার মাসীমণির হাসব্যান্ড এখানে এবছর ট্রান্সফার হয়েছেন। তাই ছুটিতে চলে এলাম। " বোলে সে হাসলো।কি মিষ্টি সেই হাসি। মন জুড়িয়ে দিলো অর্জুনের। তারপর বললো, "এই যে দেখছেন বাঁদরটা! মাসির ছেলে। কি দুষ্টু উফ!"
অর্জুন বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "কি নাম তোমার?"
আশ্চর্য ব্যাপার, এই দাপুটে ছেলে এখন একদম চুপ করে তার দিদির পেছনে লুকোতে শুরু করলো।
মেয়েটির আলতো ধমকের সুরে বললো, "এই তোর নাম বল! লুকোচ্ছিস কেন?"
ছেলেটি কিছুই উত্তর দিলো না। শুধু এক দৃষ্টিতে অর্জুনকে দেখে গেল। তারপর মুচকি হাসলো।
অর্জুনও তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "আচ্ছা তোমার নাম বলতে হবে না। দিদির নাম বলতে পারবে?"
বাচ্চাটি বললো, " বুড়ি।"
অর্জুন হো হো করে হাস্তে শুরু করাতে মেয়েটি এবার সত্যি ধমকে দিলো বাচ্চাটিক, "তুই আমার ভালো নাম জানিস না?"
অর্জুন হাসি সামলে বললো, "একই ওকে বকছেন কেন খামোখা?"
মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে শুরু করাতে অর্জুন উঠে দাঁড়ালো।
"আপনি রাগ করছেন কেন বুঝলাম না। "
"খামোখা রাগতে যাবো কেন?"
"ওমা হঠাৎ চলে যেতে শুরু করলেন..."
"এখানে দাঁড়ানোর জন্য তো আসিনি। " বলে সে বাচ্চাটিকে সাথে করে হাঁটা লাগলো।
অর্জুন তার থেকে বেশ খানিকটা লম্বা হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি হাঁটতে হলো না ওকে। প্রায় মেয়েটির সাথেই হাঁটতে থাকলো সে।
"আচ্ছা, খোকা তোমার নাম তা এবার বলো তো। "
বাচ্চাটি যেন খুব মজা পেয়েছে। সে উৎসাহের সাথে বললো, "প্রত্যয়। "
"বাহ্ তোমার তো খুব সুন্দর নাম। "
"তোমার দিদির নামের থেকে অনেক বেশী। "
মেয়েটি থিম গিয়ে বললো, "আপনি আমাদের সাথে হাঁটছেন কেন? আপনি তো অচেনা। "
অর্জুন প্রত্যয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "আমি অর্জুন চট্টপাধ্যায়। এই তো চেনা হয়ে গেল। "
মেয়েটি একটু রাগত বললো, "দেখুন আপনি এভাবে আমাদের সাথে আসবেন না। আপনি যেই হন। আপনার নাম জানতে আমি চাইনি। "
অর্জুন মাথা নেড়ে বললো, "বেশ। আসুন। তবে আপনি কিন্তু আপনার নামকে স্বার্থক করলেন। কেমন বুড়িদের মতোই হাবভাব !"
মেয়েটি কোনো কথা না বলে বাচ্চাটিকে নিয়ে এগিয়ে গেলো। অর্জুন সেদিকেই তাকিয়ে ছিল। সে এমনিতে বড়োই লাজুক ছেলে। বয়েস তিরিশের সীমানায়, মাথায় ঘন কালো চুল। গালে হালকা দাঁড়ির আভা, গোঁফটা একটু বেশি স্পষ্ট। আর ঠোঁটে এখন লেগে আছে মিষ্টি একটা হাসি, জেক একই ভাবে সূর্য এখন রাঙা আভায় ভরিয়ে দিচ্ছে তার অজান্তে।
কয়েকপা গিয়ে মেয়েটি ফিরে তাকিয়ে বললো, " আমার নাম মোটেই বুড়ি নয়। আমি ময়ূরাক্ষী। "
লাজুক ছেলেকে আজ আর পায় কে?
সে ছুটে তাদের কাছে পৌঁছালো। "বড় সুন্দর নাম তো তোমার। "
"বাহ্! অমনি তুমি হয়ে গেলাম?" ময়ূরাক্ষী হাঁটতে হাঁটতে বললো।
অর্জুনের যেন হাসি থামছিল না। সে নিজেকে দেখতে পেলে খুবই লজ্জায় পড়তো। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রেমিকরা বোধয় নক্ষত্র ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
সে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি কলকাতায় থাকো?"
মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো, "জেনে কি করবেন?"
অর্জুন কাঁধ দুলিয়ে বললো, "তোমার বয়ফ্রেইন্ডকে বলবো যে সে খুবই সৌভাগ্যবান!"
ময়ূরাক্ষী তার দিকে তাকিয়ে বললো, "তাই? তো বেশ। মানুষ নিজের ভাগ্যের ভালো জিনিস তো বোঝেই না! আপনি বললে যদি সে একটু বোঝে। "
ওরা এখন নদীর ব্রিজ এ এসে উঠেছিল। অর্জুন শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। ময়ূরাক্ষীও অর্জুনকেই দেখছিলো। কারোর যেন খেয়াল নেই প্রত্যয় ময়ূরাক্ষীর হাত ধরে টেনে যাচ্ছে।
"আসছি", বলে অর্জুন হাসলো।
"ঠোঁটে হাসি নিয়ে ময়ূরাক্ষী মাথা নাড়লো। হাসিটাও যেন সাথে সাথে একটু বাড়লো।
প্রত্যয়কে একবার আদর করে অর্জুন যেতে প্রস্তুত হলো। কেউ কোনো কথা বলছিলো না।
কিন্তু আজ তো অর্জুন মোটেই অর্জুন নয়; বা হয়তো আজ-ই সে অর্জুন।
পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ছোট নোটবই বের করে তার একটা পাতায় নিজের ফোন নম্বর লিখে সেটা ডায়েরি থেকে ছিঁড়ে ময়ূরাক্ষীর ফাঁকা হাতে গুঁজে দিলো।
তারপর বললো, "আয়। "
মেয়েটি ঘুরে তাকাতেই অর্জুন বললো, "নতুন এসেছেন?"
নিঃশব্দে হেসে মেয়েটি বললো, "আমার মাসীমণির হাসব্যান্ড এখানে এবছর ট্রান্সফার হয়েছেন। তাই ছুটিতে চলে এলাম। " বোলে সে হাসলো।কি মিষ্টি সেই হাসি। মন জুড়িয়ে দিলো অর্জুনের। তারপর বললো, "এই যে দেখছেন বাঁদরটা! মাসির ছেলে। কি দুষ্টু উফ!"
অর্জুন বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "কি নাম তোমার?"
আশ্চর্য ব্যাপার, এই দাপুটে ছেলে এখন একদম চুপ করে তার দিদির পেছনে লুকোতে শুরু করলো।
মেয়েটির আলতো ধমকের সুরে বললো, "এই তোর নাম বল! লুকোচ্ছিস কেন?"
ছেলেটি কিছুই উত্তর দিলো না। শুধু এক দৃষ্টিতে অর্জুনকে দেখে গেল। তারপর মুচকি হাসলো।
অর্জুনও তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, "আচ্ছা তোমার নাম বলতে হবে না। দিদির নাম বলতে পারবে?"
বাচ্চাটি বললো, " বুড়ি।"
অর্জুন হো হো করে হাস্তে শুরু করাতে মেয়েটি এবার সত্যি ধমকে দিলো বাচ্চাটিক, "তুই আমার ভালো নাম জানিস না?"
অর্জুন হাসি সামলে বললো, "একই ওকে বকছেন কেন খামোখা?"
মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যেতে শুরু করাতে অর্জুন উঠে দাঁড়ালো।
"আপনি রাগ করছেন কেন বুঝলাম না। "
"খামোখা রাগতে যাবো কেন?"
"ওমা হঠাৎ চলে যেতে শুরু করলেন..."
"এখানে দাঁড়ানোর জন্য তো আসিনি। " বলে সে বাচ্চাটিকে সাথে করে হাঁটা লাগলো।
অর্জুন তার থেকে বেশ খানিকটা লম্বা হওয়ায় খুব তাড়াতাড়ি হাঁটতে হলো না ওকে। প্রায় মেয়েটির সাথেই হাঁটতে থাকলো সে।
"আচ্ছা, খোকা তোমার নাম তা এবার বলো তো। "
বাচ্চাটি যেন খুব মজা পেয়েছে। সে উৎসাহের সাথে বললো, "প্রত্যয়। "
"বাহ্ তোমার তো খুব সুন্দর নাম। "
"তোমার দিদির নামের থেকে অনেক বেশী। "
মেয়েটি থিম গিয়ে বললো, "আপনি আমাদের সাথে হাঁটছেন কেন? আপনি তো অচেনা। "
অর্জুন প্রত্যয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, "আমি অর্জুন চট্টপাধ্যায়। এই তো চেনা হয়ে গেল। "
মেয়েটি একটু রাগত বললো, "দেখুন আপনি এভাবে আমাদের সাথে আসবেন না। আপনি যেই হন। আপনার নাম জানতে আমি চাইনি। "
অর্জুন মাথা নেড়ে বললো, "বেশ। আসুন। তবে আপনি কিন্তু আপনার নামকে স্বার্থক করলেন। কেমন বুড়িদের মতোই হাবভাব !"
মেয়েটি কোনো কথা না বলে বাচ্চাটিকে নিয়ে এগিয়ে গেলো। অর্জুন সেদিকেই তাকিয়ে ছিল। সে এমনিতে বড়োই লাজুক ছেলে। বয়েস তিরিশের সীমানায়, মাথায় ঘন কালো চুল। গালে হালকা দাঁড়ির আভা, গোঁফটা একটু বেশি স্পষ্ট। আর ঠোঁটে এখন লেগে আছে মিষ্টি একটা হাসি, জেক একই ভাবে সূর্য এখন রাঙা আভায় ভরিয়ে দিচ্ছে তার অজান্তে।
কয়েকপা গিয়ে মেয়েটি ফিরে তাকিয়ে বললো, " আমার নাম মোটেই বুড়ি নয়। আমি ময়ূরাক্ষী। "
লাজুক ছেলেকে আজ আর পায় কে?
সে ছুটে তাদের কাছে পৌঁছালো। "বড় সুন্দর নাম তো তোমার। "
"বাহ্! অমনি তুমি হয়ে গেলাম?" ময়ূরাক্ষী হাঁটতে হাঁটতে বললো।
অর্জুনের যেন হাসি থামছিল না। সে নিজেকে দেখতে পেলে খুবই লজ্জায় পড়তো। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রেমিকরা বোধয় নক্ষত্র ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
সে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি কলকাতায় থাকো?"
মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো, "জেনে কি করবেন?"
অর্জুন কাঁধ দুলিয়ে বললো, "তোমার বয়ফ্রেইন্ডকে বলবো যে সে খুবই সৌভাগ্যবান!"
ময়ূরাক্ষী তার দিকে তাকিয়ে বললো, "তাই? তো বেশ। মানুষ নিজের ভাগ্যের ভালো জিনিস তো বোঝেই না! আপনি বললে যদি সে একটু বোঝে। "
ওরা এখন নদীর ব্রিজ এ এসে উঠেছিল। অর্জুন শুধু তার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। ময়ূরাক্ষীও অর্জুনকেই দেখছিলো। কারোর যেন খেয়াল নেই প্রত্যয় ময়ূরাক্ষীর হাত ধরে টেনে যাচ্ছে।
"আসছি", বলে অর্জুন হাসলো।
"ঠোঁটে হাসি নিয়ে ময়ূরাক্ষী মাথা নাড়লো। হাসিটাও যেন সাথে সাথে একটু বাড়লো।
প্রত্যয়কে একবার আদর করে অর্জুন যেতে প্রস্তুত হলো। কেউ কোনো কথা বলছিলো না।
কিন্তু আজ তো অর্জুন মোটেই অর্জুন নয়; বা হয়তো আজ-ই সে অর্জুন।
পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ছোট নোটবই বের করে তার একটা পাতায় নিজের ফোন নম্বর লিখে সেটা ডায়েরি থেকে ছিঁড়ে ময়ূরাক্ষীর ফাঁকা হাতে গুঁজে দিলো।
তারপর বললো, "আয়। "
No comments:
Post a Comment