Friday, December 30, 2022

কর্মকার

স্কুলে মাঝেসাঝেই আমাদের শিক্ষক - শিক্ষিকারা প্রশ্ন করতেন - আমরা জীবনে কে কি হতে চাই? সেখানে মনে পড়ে না কেউ cricketer, rockstar বা wrestler হতে চেয়েছিল কি না - আমরা ছিলাম মফস্বলের সন্তান; মধ্যবিত্ত। অনেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতো, কেউ কেউ হয়তো ইঞ্জিনিয়ার, আর আমরা কয়েকজন ছিলাম যারা বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে নিজেদের কল্পনা করতাম। (যারা খেলাধুলায় exceptional ছিল, এই ঊর্ধ্বমুখী সমাজ তাদের নিয়ে তেমন ব্যস্ত ছিল না।)

আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে অনেকের সাথেই আমার যোগাযোগ অব্যাহত থেকেছে গত পনেরো বছর। তাদের জীবনের অধ্যায় পাল্টেছে, স্বাভাবিক মতে। আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই আজ 'established' - শতকরা ৯০ ভাগ আজ IT professional, দু - তিন জন ডাক্তার, কিছু ব্যবসায়ী, আর গুটি কয়েক ইঞ্জিনিয়ার।

 এই ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে একজন এখন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর- পূর্বের এক সুপার স্পেশালিটি জেলা হাসপাতালের electrical-engineer ইন চার্জ। ধরে নেওয়া যাক তার নাম সত্যজিৎ কর্মকার। আমার স্কুলে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত দুটো করে সেকশন থাকতো। পড়াশোনায় ভালোরা থাকতো A সেকশনে, বাকিরা B তে। সত্য A সেকশনে আসে দশম শ্রেণীতে। আমাদের ক্লাসের তথাকথিত "স্ট্যান্ড" করা ছাত্রদের দলে সত্য ছিল না। স্কুলের পরে এক বছর Physics Honours এর course করে, Joint Entrance Test দিয়ে বর্ধমানে Electrical engineering নিয়ে B. Tech. করে সত্য। তারপর যাদবপুর থেকে নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এ M. Tech. (স্বর্ণপদক জয়ী) এবং তারপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইঞ্জিনিয়ার।

সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। দশ তলা। তার civil, mechanical, electrical - সব architechture - ই আলাদা সাধারণ জেলা হাসপাতালের থেকে। ১১ হাজার ভোল্টের ডাইরেক্ট লাইন আসে হাসপাতালে, সেখান থেকে ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে লাইন কনভার্সন হয় ৪৪০ ভল্টে। সেই ট্রান্সফর্মার ঠান্ডা রাখতে দুই বড় বড় পাম্প যার মধ্যে আবার আর্দ্রতা কন্ট্রোল করে রাখা দরকার সব সময়। ট্রান্সফর্মার রুম থেকে current এর লাইন গেছে পাশের Main Panel রুমে। এই Panel রুম হলো হাসপাতালের ইলেক্ট্রিসিটির প্রধান ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার। এখান থেকে লাইন দু ভাগে বিভক্ত - একটি হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের ভেতরের জন্য এবং অন্যটি বাইরের (স্ট্রিট লাইট, ইত্যাদি)। এই panel রুম থেকেই সমস্ত হাসপাতালের ইলেক্ট্রিসিটি কন্ট্রোল করা হয়। বিভিন্ন সেন্সর প্রতিটি সেকশনের সুরক্ষা নির্ধারণ করতে regularly monitor করা হয়। Panel রুমের নিচে বেসমেন্ট - সেখানে আছে water purification এর ব্যবস্থা এবং তার পাশে রাখা আছে তিনটে water pump আগুন মোকাবিলার জন্য। এই তিনটে পাম্পের প্রথমটি ছোট - কোথাও আগুন লাগলে এই পাম্পের সংলগ্ন pressure valve সেন্সরের কাজ করে। আগুন লাগলে অটোমেটিক pressure কমার কথা এবং পাম্প চালু হবার কথা। হাসপাতালের বিভিন্ন sprinkler তখন নিজে নিজেই আগুন নেভাতে উদ্যোগী হবে। যদি এই সিস্টেম দ্বারা আগুন আয়ত্বে না আসে, তাহলে দ্বিতীয় (মাঝারি) পাম্পটি অটোমেটিক চালু হতে পারে এবং আগুন আয়ত্বে আনতে পারে। কিন্তু এই পাম্প ম্যানুয়ালি বন্ধ করতে হয়, নয়তো হাসপাতালে বন্যাও আসতে পারে। আগুনের সমস্যা বড় জটিল। অনেক সময় এক জায়গার আগুন ফাঁক ফোকর দিয়ে এদিক ওদিক ঢুকে এই পাম্প গুলোর সেন্সর নষ্ট করে দিতে পারে। তার জন্য রাখা আছে তৃতীয় পাম্পটি - যেটা diesel ছাড়া আর কারোর কথা শোনে না।

Basement থেকে এবার ওঠা যাক Panel রুমের ছাদে। এখানে রাখা আছে হাসপাতালের Temperature controlled water tank। এই tank গুলোর কাজ হলো, ডাক্তারদের কথা মত যেখানে যেমন দরকার সেই রকম তাপমাত্রায় purified জল সাপ্লাই দেওয়া। আমি thermodynamics এর ছাত্র। কথায় কথায় Isothermal সিস্টেম ধরে নি। চোখের সামনে তার real life উদাহরণ দেখে আমার মন ভরে গেল। পাশাপাশি দুটি পাইপ - একটিতে যাচ্ছে ঠান্ডা জল, অন্যটিতে গরম। দুটি পাইপে জলের গতি বিপরীত মুখী। সিমেন্টের পাইপ - বাইরে থেকে হাত দিলে তাপমাত্রার তফাৎ বোঝার উপায় নেই! 

এখন যাওয়া যাক দশ তলার মাথায়। সেই basement থেকে যেই জায়গা পর্যন্ত জল ওঠানো হচ্ছে। এই ছাদে বইছে ঠান্ডা দুষণহীন বাতাস। ছাদ জুড়ে লাগানো আছে Solar Panel. হাসপাতালের প্রধান ইলেক্ট্রিসিটির source কিন্তু সেই ১১ কিলো ভল্টের লাইন। তাও কিছু additional power এর যোগান দেয় এই solar panel - যা synchronize করা আছে একতলার Panel রুমের টোটাল পাওয়ার জেনারেশনের সাথে।

এ ছাড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অক্সিজেন ব্যবস্থাও উন্নততর। প্রতি বেডের পাশে আছে অক্সিজেন, air, বা ভ্যাকুয়ামের আউটলেট। একদম নিচে গ্রাউন্ড ফ্লোরে আছে একটা কন্ট্রোল রুম যেখান থেকে প্রতি ফ্লোরে, প্রতি বেডে যাতে গ্যাস বা ভ্যাকুয়াম ঠিক মত পৌঁছয় - তা যথাযথ দেখা হয়।

আমার ভেবে গর্ব হয়, এই মহামূল্যবান হাসপাতাল সামলাচ্ছে আমারই সাথে বড় হয়ে ওঠা এক মফস্বলের ছেলে। এখন সেখানে বসতে চলেছে MRI machine। কত মানুষ সস্তায় এখন চিকিৎসা পাবে, সুস্থ হয়ে উঠবে - এবং এর পেছনে নিঃশব্দে থাকবে আমার বন্ধু সত্যজিৎ "কর্মকার" ।

নিজের জীবনকে অন্যভাবে দেখতে শেখায় কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, চেতনা এবং কর্মনিশ্ঠা। জয় হোক এমন মানবজীবনের!

বন্ধু

 ভোর-রাতে, নিঃশব্দে সময় এসেছিল পাশে  জীবনের কিছু ক্ষণ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে । হাতে হাত, পুরোনো দুই বন্ধুর দেখা বহুদিন পর; হঠাৎ করেই খুঁজে...