Monday, May 30, 2022

গুরু

ডক্টরেট শেষ করার সময় একবার সুযোগ এসেছিলো জীবন বৃত্যান্ত লেখার। থিসিসের সাথে জুড়ে দেওয়া acknowledgement সেক্শন। এক অধ্যায়ের ইতি টানা, আপন হাতে। শিক্ষালাভের প্রতি স্তরে নিজের গুরুদের প্রণাম সেরেছিলাম। প্রণাম করা হয়নি, মনে রাখা হয়নি এমন একজন মানুষকে যিনি সর্বোপরি; যাঁর আশীর্বাদে নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি সমস্ত অন্ধকারে; যিনি প্রকৃত অর্থেই আমার গুরু, আমার নবজীবনের সীমানা শিখা। 

মুখ ফুটে এই মানুষটিকে আমি এইসব কোনো কথাই বলিনি কোনোদিন। আজ আশ্চর্য হচ্ছি, গত পাঁচ বছরে আমার মনেও পড়েনি ওনার অবদানের কথা আমার জীবনে। হয়তো অনেক অভিমান তার কারণ, বা আমার নির্বুদ্ধিতা, অথবা আমার স্বার্থপর দৃষ্টিভঙ্গি যা নিজের বাইরে কিছুই দেখতে দেয়নি। তবে পরম সত্যি এই যে, জীবনে যদি কখনও ঈশ্বরের উপলব্ধি করে থাকি, সাহসী হয়ে থাকি, তার গভীরতম কারণ এই মানুষটি। 

যাঁর কথা বলছি, উনি আমার চোখে শুধুই আমার গুরু। গুরু, যাঁর চোখে চোখ রাখার ক্ষমতা যদি আমার হয় তাহলে আমার চেয়ে বেশি কলঙ্কিত কেউ হবে না, উনি আমার শ্রদ্ধার শ্রেষ্ঠ। 

আমার নিজের স্বত্যাকে ভাঙলে বেশির ভাগটা বিজ্ঞানী হবে না; হবে তার্কিক। শিক্ষায় হয়তো তর্ক প্রয়োজন, যেমন সমর্পন, তেমনই। কিন্তু সমর্পন যদি আসে আলস্য অথবা ভাবনার প্রতি বিকর্ষণ থেকে, তাহলে যেমন তার মূল্য বড়ই নগন্য, ঠিক তেমনই অহংকার থেকে আসা তর্কও বাস্তবে মূল্যহীন, ধংসাত্মক। গুরুর সাথে ওনার আসন-সুলভ তর্ক করতে প্রয়োজন স্বচ্ছ মন। নিজেকে তুচ্ছ মনে না হলে মনের এই রূপ শরীরে নিজের আশ্রয় খোঁজে না। সময়ের সাথে বিজ্ঞানে আমার জ্ঞানবৃদ্ধি হয়েছে, গত সাড়ে তিন বছর আমায় আমার তুচ্ছতার একটু হলেও দর্শন করিয়েছে। আমি মুগ্ধ হয়েছি যখন কোনো নতুন প্রশ্ন বা উত্তর খুঁজে পেয়েছি নিজের ভেতর, শেখার আনন্দ হয়েছে, অবশ্যই কিছু মানুষকে নতুন রহস্যভেদের স্বাদও দিয়েছি মাঝেমাঝেই। কিন্তু আমার ঈশ্বর? তাঁর থেকে দিন দিন দূরে আসতে আসতে এখন যেন নিজের স্বত্যারই সীমায় এসে দাঁড়িয়েছি। এখন শুধু সাথে আছে হতাশা, এবং গভীর, নিরুদ্ধ অহংকার। 

জীবন, সংসার, পরীক্ষা, শিক্ষা সবই কি শুধু খেলা? হয়তো তাই। কে কতটা তরবারি সামলে সুযোগ বুঝে প্রতিপক্ষকে মক্ষম কোপ মারতে পারে, জীবনের প্রতি পদক্ষেপ যেন তারই নিশান দুলিয়ে বিজয়রথ চালাচ্ছে। শুধু আলাদা থেকে যায় স্নেহ; নিষ্পাপ। ঘন, কলুষিত অন্ধকার চিড়ে আপনবিকশিত আলো; যার মন্ত্রে অন্ধকার খুব সহজেই সোঁপে দেয় নিজের অস্তিত্ব। এমন আলো- যা শোনা যায় সেতারের ঝঙ্কারে- মধ্যরাতে। গুরুর আশীর্বাদ ছাড়া আদৌ এই আলোর স্পর্শ মেলে?

আমার শিক্ষামঞ্চে না আমি অর্জুন, না একলব্য। প্রকৃত শিষ্য হওয়ার জন্য মনের যে সাহস, যে জোর প্রয়োজন, আমার কাছে আছে তার সিকি ভাগ মাত্র। সেই কারণেই আমি কার্যক্ষেত্রে সৌভাগ্যেবান হয়েও মধ্যবিত্ত। কলেজে বা ইউনিভার্সিটিতে নিজেকে সতেজ ও বড় রেসের ঘোড়া হিসেবেই ভেবেছি শুধু; জেদ এবং অহংকার দুইই ছিল সমানে সমানে। এখন কাটাছেঁড়ায় দেখা যাবে জেদের জাফরান হওয়ার জো। 

যে শিক্ষা শুরু হয়েছিল আমার নবজীবনের সাথে, তাকে আমার তার্কিক মন কোথায় হারিয়ে ফেললো কালের লীলায়? চিরকাল তো অহংকার ছিল না, সমর্পন তো ছিল প্রাককালে। হয়তো স্বচ্ছ তার্কিক মন, সাথে তেজ ও জেদের সমন্বয়ও  ছিল। যা ছিল না তা হলো ক্ষমতা -সৎ সাহস। প্রশ্ন করার -প্রকৃত প্রশ্ন - 'কেন ?' - এই শব্দটা সঠিক স্থানে বের করে আনার । সেই সময় এই প্রশ্নকে চেপেছি জেদ দিয়ে, গাঢ় হয়েছে অহংকার ধীরে ধীরে, শিক্ষার পথ বদলেছি লোভে - মূলত শিক্ষারই লোভে। 

২০১৫ সালে যখন আধ্যাত্মীক হাওয়ার প্রথম প্রলেপ ছুঁয়ে চলে গেছিলো আমায়, ভয় পেয়েছিলাম। হারিয়ে ফেলার। স্বচ্ছ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলাম নতুন করে। কিন্তু অহংকার তো ত্যাগ করিনি তখনও। গর্বিত বোধ করেছি জ্ঞানে, অজ্ঞানে। 

আমায় ঈশ্বর কোন পথে নিয়ে যাবেন তা উনিই জানেন। আজ এই সব কথা লেখার কারণ হয়তো আমার ভয়, ঈশ্বর কে কোনোদিন না ফিরে পাওয়ার ভয়। অহংকার, ক্রোধ, ভয়-মুক্ত না হওয়ার ভয়। লোভের ভয়। ছলনার ভয়। শুধু ভয় না। এই অবিশ্বাস ভরা মনকে পুনর্বিশ্বাসী করার- হয় কামনা, অথবা চেষ্টা। 

যে মানুষটিকে শ্রদ্ধা করে আজকের এই লেখা, ওঁনার হাতে আমার উপনয়ন হয়েছিল ২২ বছর আগে। থিসিসের acknowledgement-এ নিজের গুরুকে ভুলে যাওয়া আমায় নিজের চোখে নিজেকে ছোট করে দিয়েছে। যাঁর জন্য জীবনের অসংখ্য প্রতিকূলতায় লড়াই করেছি নির্দ্বিধায়, ওনাকেই স্মরণ করতে ভুলে যাই - এই স্বার্থপর স্বত্যা থেকেই নিজেকে বের করে আনা আজ প্রয়োজন বোধ করেছি। 

নতুন কাজ , নতুন রহস্যভেদে আনন্দ আছে নিশ্চই, শান্তি নেই। কোনো নতুন খেলাই আমি আর খেলতে চাইনা। জেতার মানসিকতা আমার বরাবরই অল্প। আছে, তবে আমার হৃদয় জুড়ে নয়। আমি খেলোয়াড় নই কোনো কালেই। তাই ছোট বড় খেলায় আমার অহংকার কোথাও জিতেছে, কোথাও মুখ থুবড়ে পড়েছে -কিন্তু আমি শুধুই হেরেছি - নিজেকে - তিলে তিলে।

গত চার বছরে আমি পড়াশোনা করেছি ঠিকই, কিন্তু ছবি তুলিনি। আজ নিজের তোলা কিছু পুরোনো ছবি দেখে নিজেকেই মনে পড়লো দুপুরবেলায়। অস্ট্রিয়ায় আল্প্স-ঘেরা ইন্সব্রুক শহরের দিনান্তের blue hour- এর ছবি। এই ছবির সাথে জড়িয়ে আছে একজনের স্নেহ; আমার আরেকজন গুরু - যিনি আমায় হাত ধরে সফ্ট ম্যাটার শিখিয়েছেন, যিনি আমায় ভালোবাসা না দিলে আমার ড্রেসডেন, বার্লিন, মিউনিখ, প্রাগ, কাশী, প্যারিস, আখেন, জেরুসালেম দেখা হতো না। আমার আলস্যে ওনাকে আমি অপমান করবো না। 


নিজের মনের কথা লিখে রাখা আজ জরুরি হয়ে উঠেছে। আমার মন আছে আমার শহর কলকাতায়। বেড়ে ওঠা না হলেও, আমার বড় হওয়ার শহর। আমার স্বপ্নের শহর। বিদেশ ঘুরতে আমি এই কারণেই পছন্দ করতাম কারণ আমার ফেরার ঠিকানা ছিল কলকাতা; বন্ধুদের মাঝে, স্নেহের কোলে, বাবা-মার মাঝে। সকল পাওয়া-হারানোর মধ্যে যা চাপা পড়ে যায়, তা হলো এন্টালি, শ্যামবাজার, সল্ট-লেক, ফোর্ট-উইলিয়ামের কিছু স্মৃতি, সেই সময়ের - যখন চোখে স্বপ্ন ছিল না, শুধু ছিল সারল্য; মনে অহংকার পোষার স্থান নিয়ে ছিল ক্যাবলামির সাথে বিবাদ; ভালোবাসা ছিল নিঃস্বাসের তরঙ্গ, ভয় ছিল মায়ের শাসন; ঈশ্বর ছিলেন প্রাণে, শরীরে, পৃথিবীতে। 

এতকিছু গুরুদেবকে বলার মতো ক্ষমতা আমার নেই। মনে মনে প্রণাম জানিয়েই ওনার আশীর্বাদ পাই, আর কিছু দিয়ে এমনিই বা আমার কি করার আছে?

Wednesday, May 18, 2022

The silica merchant

 Words, like pearls of ocean, rest 

Within me, buried beneath waves of silence;

I watch, I adore, I admire 

The new, and the nostalgia, alike 

I look for sweat through cobbled streets

I let go of what is, and isn't me.


A Bedouin, I trade unhinged, within me 

Faces, smoke, mirrors, and other veils;

And when it rains after eons of neutrality,

I scourge the desert for sand and sanity.


A merchant of shining silica, I live in glitter 

Nevermind the license, to be, touch or plunder;

Birds of prey, words of wisdom on the horizon 

Or simply mirages for the damned, I wonder.









বন্ধু

 ভোর-রাতে, নিঃশব্দে সময় এসেছিল পাশে  জীবনের কিছু ক্ষণ নিয়ে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে । হাতে হাত, পুরোনো দুই বন্ধুর দেখা বহুদিন পর; হঠাৎ করেই খুঁজে...